দণ্ড পাওয়া ৩ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পেলেন সেই বিচারক

0

আদালত অবমাননার দায়ে কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) বিচারক সোহেল রানাকে কারাদণ্ড দেওয়ার ৩ ঘণ্টার মধ্যেই আপিলের শর্তে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

বিচারপতি মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ও বিচারপতি মাসুদ হাসান দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় এ আদেশ দেন। এই বিচারককে ৩০ দিনের জামিন দিয়েছেন আদালত।
 
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই বিচারককে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। কোনো বিচারককে কারাদণ্ড দেয়ার নজির এটিই প্রথম। 

দণ্ডিত এই বিচারককে ৭ দিনের মধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছিল সকালের আদেশে। তবে দুপুরে জামিন পাওয়ায় তাকে আর আত্মসমর্পন করতে হচ্ছে না।

বিচারক সোহেল রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ, কুমিল্লার সিজেএম আদালতে বিচারক থাকা অবস্থায় হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে তিনি একটি মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছিলেন। এছাড়াও একই মামলায় হাইকোর্টের আদেশ উপেক্ষা করে তিনি একাধিক আদেশ দেন। এরপর উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে ব্যাখ্যা দাখিল করেছিলেন সোহেল রানা। ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে সোহেল রানার প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার আদেশ দিলেন।

আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী প্রণয় কান্তি রায়। সোহেল রানার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।

পরে আইনজীবী প্রণয় কান্তি রায় সাংবাদিকদের বলেন, সোহেল রানা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছিলেন। কিন্তু তার নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ না করে তাকে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের মধ্যে মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ দেওয়ার পরই তাকে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয় বলে জানান সোহলে রানার আইনজীবী আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।

আইনজীবীদের তথ্যমতে, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামুন চৌধুরী ও রিয়া আক্তার দম্পতির বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা হয়।

মামলাটির কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে মামুন-রিয়া দম্পতির করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। একই সঙ্গে মামলাটির কার্যক্রম চার মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট।

২০১৯ সালের ৬ মার্চ হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন।

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও কুমিল্লার তৎকালীন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা গত ১০ এপ্রিল মামলায় অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনকালে আদালতে মামুন উপস্থিত ছিলেন। রিয়া অনুপস্থিত থাকায় তাকে পলাতক ঘোষণা করেন আদালত।

এ অবস্থায় উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সোহেল রানাকে হাজির হতে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন মামুন।

গত ১৪ আগস্ট হাইকোর্ট এক আদেশে সোহেল রানাকে তলব করেন। উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গত ২১ আগস্ট তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তিনি হাইকোর্টে হাজির হন। পরবর্তী সময়ে জবাব দাখিল করেন।

তবে জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ২৮ আগস্ট সোহেল রানার প্রতি স্বতঃপ্রণোদিত আদালত অবমাননার রুল দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ৯ অক্টোবর তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালত অবমাননার রুলের পর গত ৩১ আগস্ট সোহেল রানা মামলাটির অভিযোগ গঠনের আদেশ প্রত্যাহার করেন।

হাইকোর্টের ধার্য তারিখে সোহেল রানা সময়ের আরজি জানান। হাইকোর্ট ১২ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ রাখেন।

আদালত অবমাননার রুলের পরিপ্রেক্ষিতে সোহেল রানা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তবে তার ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ না করে হাইকোর্ট কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here