বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়েছে বলেই দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে থেকে প্রিয়জনের সাথে ঈদ করতে গ্রামে আসা এবং ঈদ উদযাপন শেষে কর্মস্থলে ফেরা- সব কিছুই হয়েছে/হচ্ছে ঝামেলাহীন। নৌ কিংবা সড়ক পথ কোথাও এবার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় যাত্রী হয়রানি কিংবা বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এক পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়ে যাওয়ায় এমন স্বস্তির ঈদ যাত্রা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সুবিধাভোগীরা।
পদ্মা সেতু উদ্ধোধনের পর ঈদে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বাড়ি ফেরা কিংবা ঈদ পরবর্তী কর্মস্থলে যাওয়া কোনটাই এখন আর কঠিন নয়। পদ্মা সেতুর কল্যাণে এখন বরিশালের পাঁচ জেলার উপজেলা পর্যায় থেকেও ঢাকাসহ সারা দেশের অন্যস্থানের বাস ছাড়ছে ঘণ্টায় ঘণ্টায়। পরিবহন কোম্পনিগুলো দিনরাত যাত্রী বোঝাই বাস ছাড়ছে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
বরিশালের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের ঈগল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার ফয়সাল কবির জানান, এবারের ঈদযাত্রা অনেক স্বস্তিদায়ক হয়েছে। চাঁদরাত পর্যন্ত পরিবহন কোম্পানিগুলো ঢাকা থেকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দক্ষিণের বিভিন্ন রুটে বাস ছেড়েছে। এ কারণে এক সাথে বেশি চাপ পড়েনি। ঈদের পর ফেরার সময়ও একই অবস্থা।
তিনি বলেন, ‘ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে কিছু যাত্রী ফিরতে শুরু করেছে। গতকাল আগের দিনের চেয়ে যাত্রী কিছুটা বেড়েছে। গতকাল সরকারি অফিস খুলেছে। এ কারণে মূল চাপ পড়বে আজ মঙ্গলবার থেকে। যাত্রীর চাপ সামলাতে পরিবহন কোম্পানিগুলো আধুনিক বাসের বহর প্রস্তুত রেখেছেন। আজ থেকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাসগুলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। এ লক্ষ্যে আগাম টিকেটও বিক্রি হয়েছে।’ আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কর্মস্থলমুখী যাত্রীর চাপ অব্যাহত থাকবে বলে তারা ধারণা করছেন।
এক সাথে অতিরিক্ত চাপ না পাড়ায় এবার সড়কে দুর্ঘটনা হয়েছে কম। ঈদের সময় বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যুর রেকর্ড রয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমান।
একই চিত্র নৌ পথে। ঈদের আগে ঢাকা থেকে একদিনে সর্বাধিক সাতটি লঞ্চ ছেড়েছে বরিশালের উদ্দেশ্যে। পদ্মা সেতু উদ্ধোধনের আগে ঈদের সময় ১০ থেকে ১৫টি লঞ্চেও সামাল দেয়া যেত না যাত্রীর চাপ। নৌ পথে অতিরিক্ত ভাড়া ছাড়াই বাড়ি ফিরেছে মানুষ। ঈদ শেষে ফিরছেনও স্বস্তিতে। ঈদের দ্বিতীয় দিন গত রবিবার বরিশাল নদী বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়েছে ৪টি লঞ্চ। যার ডেক এবং কেবিনের অনেকাংশ ছিলো খালি। যা অন্য বছর ছিলো কল্পনাতীত। গতকাল সোমবার ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়েছে পাঁচটি লঞ্চ। কোন লঞ্চে যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ ছিলো না বলে জানিয়েছেন ঘাট শ্রমিক কবির হোসেন।
পারাবত লঞ্চ কোম্পানীর সুপারভাইজার নজরুল খান জানান, ২৫ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নৌ পথে যাত্রীর কিছু চাপ থাকতে পারে। চাপ সামলাতে লঞ্চ কোম্পানিগুলোর প্রস্তুতি রয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এটা তো অবশ্যই সত্য যে, পদ্মা হয়ে যাওয়ার পর বরিশাল থেকে ঢাকা বা অন্য জেলার সাথে মানুষের যোগাযোগ সহজ হয়েছে। আগে লঞ্চে গিয়ে ঝামেলা হতো, সিট পেত না, ওভারলোড হত। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর প্রচুর বাস চলছে। এবার মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে আনন্দের সাথে ঈদ করতে পেরেছে। আসা এবং যাওয়ায় মানুষের ভোগান্তি হয়নি।