মানুষের গলার সামনের দিকে চামড়ার নিচে এর অবস্থান। এই গ্রন্থি থেকে থাই রঙিন নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়ে রক্তের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে যায়। থাই রঙিন হরমোন শারীরিক ও বিপাকীয়, কর্মতৎপরতায় অত্যন্ত জরুরি।
কোনো কারণে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে মাত্রাতিরিক্ত হরমোন নিঃসৃত হওয়াকে হাইপারথাই রয়েডিজম বলা হয়। অতিমাত্রায় থাইরয়েড হরমোনের প্রভাবে শারীরিক ও বিপাকীয় কার্যক্রম অত্যধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। ফলে রোগীর অস্থিরতা অসহনশীলতার মতো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। অতিমাত্রায় থাইরয়েড হরমোনের প্রভাবে হার্টের ওপর অনেক ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। যেমন : হার্ট খুব দ্রুত চলতে থাকে, হার্ট খুব জোরে সংকুচিত হয়, রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হতে পারে ও হার্টফেইলুর দেখা দিতে পারে।
কারণ : থাইরয়েড হরমোনের প্রভাবে হৃৎপিণ্ড মাংসপেশিতে নানা রাসায়নিক পরিবর্তন সংঘটিত হয়। ফলে উপরোক্ত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রোগীর শরীরে রক্তের চাপ বৃদ্ধি পায় এবং চরম পর্যায়ে এসে রক্তের তরলতা কমতে থাকে।
লক্ষণ : থাইরয়েড হরমোনজনিত অসুস্থতার কারণে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ সারা শরীরে বিস্তৃত থাকে। তবে হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালির সমস্যা সবচেয়ে প্রকট আকার ধারণ করে ও রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে এসব লক্ষণ পরস্ফুিটিত হয়ে থাকে। যার ফলে রোগী হার্টের অসুস্থতায় ভুগতে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো শতকরা ৯০ ভাগ রোগীই সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে থাইরয়েডজনিত হৃদরোগ সমস্যা থেকে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করতে পারেন। এ রোগের লক্ষণগুলো হলো বুক ধড়ফড় করা, ভীতি সঞ্চার হওয়া, হৃৎপিণ্ডের গতি অত্যধিক বেড়ে যাওয়া, বুকে অস্বস্তি অনুভব করা, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, অস্থিরতা, কাজের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়ে আসা, খুব বেশি গরম অনুভূত হওয়া, শরীর প্রচণ্ড ঘেমে যাওয়া, হাত-পায়ের তালু সবসময় ভেজা থাকা, শরীর, হাত, পা, মুখ ফুলে যাওয়া, ক্ষুধা মন্দা, পেটে গ্যাস হওয়া, পেটের উপরিভাগের ডান পাশে চাকা অনুভূত হওয়া এবং ব্যথা অনুভূত হওয়া। ক্ষেত্রবিশেষে অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের জন্য এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো সমস্যায় পতিত হওয়া।
জটিলতা : অতি মাত্রার থাইরয়েড হরমোনের প্রভাবে কিডনিতে কিছু পরিবর্তন ঘটে থাকে। ফলে কিডনি লবণ ও পানি সংরক্ষণ করে শরীরে লবণ ও পানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে। তাই কিডনির মাধ্যমে ইরাইথ্রোপয়েটিন নামক আরেকটি হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিতে রক্তে লোহিত কণিকার আধিক্য দেখা দিয়ে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।
লেখক: চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।