গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। এককালের খরস্রোতা এ নদীটি খনন হয় না দীর্ঘদিন। ফলে শীত মৌসুমে নদীটি রূপ নিয়েছে আবাদি জমিতে। এতে ভাঙনের কারণে জমি-জিরাত খুঁয়ে যাওয়া পরিবারগুলো চাষাবাদ করছেন নানা ফসল।
সরেজমিনে উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ফিরে দেখা গেছে বাহারি উঠতি ফসলের নজর কারা দৃশ্য। তিস্তার চরে এখন নানা জাতের শাকসবজি, আলু, বেগুন, মরিচ, ছিটা পেঁয়াজ, আদা, রসুন, সিম, ধনে পাতা, গাজর, কপি, মুলা, লাউ, গম, তিল, তিশি, সরিষা, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হচ্ছে।
বছর পনের আগে পাঁচ বিঘা জমি তিস্তা গিলে খায় হরিপুর চরের আনছার আলীর। তিনি দিনাজপুর চলে যান। পাঁচ বছর আগে এলাকায় ফিরে নিজ জমিতে আবাদ শুরু করেন। গত বছর চার বিঘা জমিতে ছিঠা পেঁয়াজের চাষ করে তার মুনাফা হয় লাখ টাকা। এ বছর নিজের জমিসহ অন্যের জমি বর্গা নিয়ে দশ বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছেন। এ মৌসুমে তার দেড়-দুই লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
হরিপুর চরের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘তিস্তার চরে দুই বিঘা জমিতে আলু, ৩ বিঘা জমিতে বেগুন ও ২০ শতক জমিতে ধনে পাতা চাষ করেছি। তিনি বলেন, ফলন ভালো হলে খরচ বাদ দিয়ে এ মৌসুমে ১ লাখ টাকা আয় হবে।’
শুধু আনছার আলী ও আমজাদ হোসেন নয়। ওই এলাকার কৃষক হাবিবুর, রহিম, খায়রুল বললেন একই কথা। তারা বলেন, যা আবাদ করেছি, ফলন ভালো হলে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হবে।
হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘তিস্তার চরাঞ্চল এখন কৃষি জোনে পরিনত হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ফসল চাষাবাদের পর তা বাজারজাত করছে কৃষকরা। আবার অনেকে নতুন করে চাষাবাদ করছেন। কিন্তু চরের কৃষকের একটাই দুঃখ চরাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ, বাজারজাত করণ এবং প্রক্রিয়াজাত করণের কোন ব্যবস্থা নাই। সে কারণে চাষীরা মুনাফা অর্জন করতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘তিস্তার চরাঞ্চলে যেসব ফসল উৎপাদন হয় তাতে করে ২-৩টি হিমাগার প্রয়োজন। অথচ সুন্দরগঞ্জে একটির বেশি হিমাগার নেই। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন থাকায় চরাঞ্চল থেকে চাষীরা উৎপাদিত পণ্য সহজে বাজারে নিতে পারছে না।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার রাশিদুল কবির বলেন, ‘তিস্তার চরাঞ্চল এখন আবাদি জমিতে পরিনত হয়েছে। চরাঞ্চলের মাটিতে পলি জমে থাকার কারণে অনেক উর্বর। সে কারণে রাসায়নিক সার ছাড়াই বিভিন্ন ফসলের ফলন ভালো হচ্ছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলে ভুট্টা, গম, আলু, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা, তিল, তিশিসহ শাকসবজি এবং নানা জাতের ধান চাষ বেশি হচ্ছে। কৃষকরা নানাবিধ ফসল চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছে দিনের পর দিন।’
তিনি বলেন, ‘চরাঞ্চলের কৃষকদের ও চাষাবাদের বিষয়ে কৃষি বিভাগ সকল ধরণের সহযোগীতা করে যাচ্ছে।’

