তিস্তার ইতিহাসে রেকর্ড, চার দফা বিপৎসীমা অতিক্রম করেও ক্ষয়ক্ষতি কম

0
তিস্তার ইতিহাসে রেকর্ড, চার দফা বিপৎসীমা অতিক্রম করেও ক্ষয়ক্ষতি কম

২৩৮ বছর আগে সর্বনাশা তিস্তা নদী যখন গতিপথ পরিবর্তন করে তখন মহাপ্রলয় ঘটেছিল এই বৃহত্তর রংপুরে। সেই থেকে আজ অবধি দুর্ভোগ বয়ে বেড়াচ্ছে তিস্তা অববাহিকার পাঁচ জেলার লাখ লাখ মানুষ। কখনো এপাড় ভেঙ্গে ওপাড় গড়ে, আবার কখনো দুকূল উপচিয়ে প্লাবিত হয়। শুকনো মৌসুমে একটু পানির জন্য চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে দুপাড়ের মানুষ। তবে তিস্তার এবার বন্যা মৌসুমে ভিন্ন রুপ দেখা গেছে। 

চার দফা বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ ছিল কম। এছাড়া রাতে উজানের ঢলে পানি বেড়েছে, একদিনে পানি চলে গেছে ভাটিতে।  এবার ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ার কারণ হিসেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, তিস্তা অতি ভাঙন প্রবণ এলাকা ২১ কিলোমিটার। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে সাড়ে ১৯ কিলোমিমটার তিস্তার তীর সংরক্ষণে কাজ আগাম করা হয়েছে। নদীর দুই পাড় ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে এবার ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। তবে নদী নিয়ে কাজ করেন তাদের মতে এবার তিস্তায় পানি কম এসেছে। ফলে বন্যা দীর্ঘ মেয়াদি হয়নি।

জানা গেছে, তিস্তা নদী এবার গতি প্রকৃতি কিছুটা বদলিয়েছে। প্রতি বছর মধ্য জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত নদীপাড়ে বন্যা পরিস্থিতি থাকে। এবার কিছুটা ব্যতিক্রম। আগস্টের খুব অল্প সময়ের জন্য বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে দুইদিন। সেপ্টম্বরে পানি খুব একটা বাড়েনি। সর্বশেষ অক্টবরে একদফা তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও এর স্থায়ীত্ব ছিল কম। দুই দিনের মাথায় পানি সরে গেছে।  এসময় বৃহত্তর রংপুরের ৫ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত এবং কিছু এলাকার ফসল নিমজ্জিত হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান একেবারে কম। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে তিস্তার অতি ভাঙন প্রবণ এলাকা রংপুরের গনাই, টেপামধুপুর, লালমিনহাটের ৫/৭টি পয়েন্টসহ বেশ কয়েকটি অতি ভাঙন প্রবণ সাড়ে ১৯ কিলোমিটার এলাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ করেছে।  ফলে ওই সব এলাকা এবার খুব একটা ভাঙনের মুখে পড়েনি। 

মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রতি বছর বন্যার সময় শত শত পরিবারের বসত ভিটা নদী গর্ভে চলে গেলেও এবার সেই সংখ্যা নগণ্য। 

ঐতিহাসিকদের মতে ১৭৮৭ সাল পর্যন্ত তিস্তা উত্তরাঞ্চলের প্রধানতম নদী ছিল। এ নদী তখন পদ্মার সাথে সংযুক্ত ছিল। নাগর নদী ছিল করতোয়ার সাথে যুক্ত। কিন্তু ১৭৮৭ সালে এঅঞ্চলে ভূ আন্দোলনের ফলে বরেন্দ্র এলাকার ভূপ্রকৃতিতে ব্যাপক পরির্বতন হয়। এসময় নাগর নদী করতোয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিস্তার পুরাতন স্রোতধারা বাধা প্রাপ্ত হয়ে গতি পরিবর্তন করে পদ্মার পরিবর্তে যমুনা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়।  সেসময় আত্রাই ও পুনর্ভবা ছোট মরা নদীতে পরিণত হয়। পরিবর্ততের ফলে আত্রাই তিস্তার বিপুল পরিমাণ পানি বহন করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। বালি জমে আত্রাইয়ের মুখ বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়। তিস্তা নিষ্কাসনের কোনো পথ না পেয়ে ক্ষীণ ধারার ঘাঘট দিয়ে প্রবাহিত হতে চায়। ১৭৮৭ সালের ২৭ আগষ্ট হঠাৎ তিস্তা বর্তমান পথে প্রবাহিত হতে শুরু করলে বৃহত্তর রংপুরে ভয়াবহ মহা প্লাবনের সৃষ্টি হয়। তখন থেকেই এই অঞ্চলের মানুষের দুঃখ শুরু হয়। যা আজ অবধি চলছে। 

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) আহসান হাবিব বলেন, এবার বন্যার আগেই অতি ভাঙন প্রবণ এলাকাগুলোর ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।  ফলে এবার নদী ভাঙন নেই বললেই চলে। 

তিনি আরও বলেন, এবার এ অঞ্চলে দীর্ঘ মেয়াদি বন্যাও হয়নি। 

রিভারাইন পিপলের পরিচালক নদী বিষয়ক গবেষক বেগম রোকেয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ এবার দীর্ঘ মেয়াদি বন্যা না হওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, এবার ভারত থেকে পানি কম এসেছে।  ফলে রাতে পানি বেড়েছে। দিনে পানি সরে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, এবার নদী ভাঙন খুব একটা নেই। এটা তিস্তার ইতিহাসে রেকর্ড। কারণ অতিভাঙন প্রবণ এলাকায় এবার আগে ভাগেই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।  ফলে নদীতে খুব একটা ভাঙন দেখা যায়নি।  মাত্র ৭০ /৮০ কোটি টাকা ব্যয় করে এবার ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়েছে।  তিস্তার সুষ্ঠু পরিচর্যা হলে নদী ভাঙন কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here