সম্প্রতি তাইওয়ান ইস্যুকে কেন্দ্র করে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বেড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড মনে করে চীন। অন্যদিকে, তাইওয়ান নিজেদের আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে মরিয়া। এর মধ্যেই চীনের তীব্র প্রতিবাদ উপেক্ষা করে গত বছরের আগস্টে তাইওয়ান সফর করেন তৎকালীন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। এতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় চীন। তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সামরিক মহড়া চালায় দেশটি। গত বছরই খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, চীন আক্রমণ করে বসলে মার্কিন বাহিনী তাইওয়ানকে রক্ষা করবে।
কিন্তু এখন আমেরিকার মুখে ভিন্ন সুর। চীন সফরে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, তাইওয়ানের স্বাধীনতার দাবিকে সমর্থন করে না আমেরিকা।
তাইওয়ান প্রণালী তথা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের শক্তি বৃদ্ধির পদক্ষেপ, চীন-রাশিয়া সখ্য, আমেরিকায় চীনা গুপ্তচর বেলুনের আবির্ভাব-সহ নানা কারণে সম্প্রতি গভীর প্রভাব পড়েছে আমেরিকা-চীন সম্পর্কে। সেই জটিলতা কাটাতেই বেইজিংয়ে পা রেখেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। পাঁচ বছর পর চীন সফরে গেলেন কোনও আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রবিবার চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গাংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্লিঙ্কেন। আলোচনা হয় চীনা পররাষ্ট্রসচিবের ওয়াং ই-এর সঙ্গেও। তার সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক হবে কি না তা নিয়ে ছিল ধোঁয়াশা। তা কাটিয়ে সোমবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠক করেন শি জিনপিং। বৈঠক শেষ হয় বিকাল ৫টা ৯ মিনিটের দিকে।
জানা গেছে, এ সময় ব্লিঙ্কেনকে শি জিনপিংকে বলেছেন, একটি সুস্থ ও ভারসাম্যযুক্ত চীন-আমেরিকা সম্পর্ক প্রয়োজন পৃথিবীর। আমেরিকার অবস্থানকে সম্মান করে চীন, তাকে সরিয়ে ফেলতে চায় না। কিন্তু একই রকম সম্মান আমেরিকার থেকেও আশা করে। আলোচনার মোড় এর পর ঘুরে যায় চীন-রাশিয়া সম্পর্ক এবং চীনে আমেরিকার উন্নত প্রযুক্তি রফতানিতে অনীহার দিকে।
ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই চীন ও আমেরিকার বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ কমে গিয়েছিল। তুচ্ছ বিষয়েও সংঘর্ষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সেটা ঠিক করার উদ্দেশ্যেই এই বৈঠক।
বৈঠকের পরে বেজিংয়ের আমেরিকান দূতাবাসে সাংবাদিক বৈঠক করেন ব্লিঙ্কেন। সেখানে স্পষ্টই জানান, আমেরিকা ‘এক চীন’ নীতিতে বিশ্বাসী। তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে ওয়াশিংটন সমর্থন করে না। তবে তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের আগ্রাসী পদক্ষেপকেও সমর্থন করে না।
কূটনীতিকদের একাংশের মতে, আমেরিকা যে ‘এক চীন’ নীতিতে বিশ্বাসী, এ কথা ওয়াশিংটনের কর্তাদের মুখে আগে শোনা গেছে। তবে বেইজিংয়ে দাঁড়িয়ে সরাসরি তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন না করার কথা বলে চীনের হাত অনেক বেশি শক্ত করলেন ব্লিঙ্কেন।
অবশ্য আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, চীন-তাইওয়ান বিবাদে কোনও পক্ষের দিকে একতরফা পদক্ষেপ নিয়ে স্থিতাবস্থা বদলের চেষ্টাকে আমেরিকা সমর্থন করে না। সূত্র: ফক্স নিউজ, ডেইলি মেইল, নিউ ইয়র্ক পোস্ট, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকে