তাইওয়ানকে অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগে আরও ১০টি মার্কিন কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চীন। এর আগে, এক সপ্তাহের মধ্যে চীন মোট ৪৫টি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর মধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান সরাসরি নিষেধাজ্ঞার আওতায় এবং ২৮টি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি নিষিদ্ধ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ১০টি মার্কিন কোম্পানিকে ‘অবিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান তালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির সাথে যুক্ত। এ কারণে তারা চীনে আর কোনো আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না এবং দেশটিতে কোনো বিনিয়োগও করতে পারবে না।
বিশ্বখ্যাত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাতা লকহিড মার্টিন, রেথিয়ন, এবং জেনারেল ডায়নামিকস-এর মতো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের চীনে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
চীনের এই পদক্ষেপ তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাদের কঠোর বার্তা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, মাত্র ছয় দিন আগে চীন একই ধরনের শাস্তি আরোপ করেছিল, যেখানে বোয়িং ডিফেন্সের একটি শাখাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তাইওয়ান ইস্যুতে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা
তাইওয়ানকে চীন তার ভূখণ্ডের অংশ মনে করে এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এটি দখলের হুমকি দিয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নতুন বছরের প্রাক্কালে তাইওয়ানকে নিয়ে কড়া বার্তা দেন এবং যেকোনো হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করেন।
তাইওয়ানের সরকার নিজেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী এবং তাদের প্রতি কৌশলগত মিত্রতার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে। সম্প্রতি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাইওয়ানের জন্য ৫৭১ মিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা সাহায্য অনুমোদন করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের পদক্ষেপকে চীন তাদের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করে। তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের এই দ্বন্দ্ব পূর্বের শীতল যুদ্ধের মতো গণতন্ত্র বনাম সাম্যবাদের আদর্শগত দ্বন্দ্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে চীন দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। চীনের দাবি, এসব পদক্ষেপ তাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ শুধু তাইওয়ান ইস্যু নয়, বরং চীন-মার্কিন সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রতিফলন। দুই দেশের মধ্যে এই উত্তেজনা আগামীতে বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং কৌশলগত সম্পর্ককে আরও প্রভাবিত করতে পারে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল