তথ্য চাইতে গিয়ে বাবার কারাদণ্ড, বাকরুদ্ধ সন্তান

0

শেরপুরের নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে তথ্য চাইতে গিয়ে শফিউজ্জামান রানা নামে এক সাংবাদিক এখন কারাগারে। সরকারি কাজে বাধা, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি ও অসদাচরণের অভিযোগে ৫ মার্চ ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার (৫ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে নকলার ইউএনও কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। 

সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানার ছেলে শাহরিয়ার জামান মাহিন (১৫) জানান, ‘তখন আমার খুব ভয় করছিল। ভয়ে আমি কিছু বলতে পারছিলাম না। ভয়ে আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না’।

ছেলের চোখের সামনে যখন বাবাকে দপ্তরপ্রধান গালাগাল করেন ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন, তখন ভয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় কারাবন্দি সাংবাদিক রানার দশম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে মাহিন। এছাড়া তাকেও ইউএনও গালাগাল করেন বলে অভিযোগ মাহিনের। 

ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বাবাকে কারাদণ্ড দেওয়ার সময়ের মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে শিশু মাহিন বলে, ‘তিন ভাইয়ের মধ্যে আমিই বড়। আমার ছোট ভাই ইমাম মাহাদী পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। তার ছোট ভাই দুই মাস বয়সের মাসুম। বাবা-মার বড় ছেলে হওয়ার কারণে মাঝেমধ্যেই বাবার সঙ্গে বিভিন্ন কাজে বাইরে যেতে হয়। সেই দিনও ছিলাম তার (সাংবাদিক রানা) সঙ্গে। বাবার সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাই। সেই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া উম্মুল বানিন ছিলেন না। তিনি (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) দাপ্তরিক একটি আলোচনায় ছিলেন। এ সময় বাবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের গোপনীয় শাখার অফিস সহকারী (সিএ) শীলা আক্তারের কাছে তথ্য চেয়ে একটি আবেদন জমা দেন। তিনি বাবাকে অপেক্ষা করতে বলেন। আমরা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করি। পরে বাবা আবারও ওই অফিস সহকারীকে আবেদনটি নিয়ে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দিতে বলেন। তখন গোপনীয় শাখার অফিস সহকারী (সিএ) শীলা আক্তার দাপ্তরিক আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন। সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। পরে বাবা কাকে যেন (সম্ভবত) জেলা প্রশাসককে ফোনে এই ভোগান্তির বিষয়টি জানান। এই বিষয়টি শীলা দাপ্তরিক আলোচনার কক্ষে ঢুকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া উম্মুল বানিন দাপ্তরিক আলোচনা শেষ না করেই সেই কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন।’

ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন এসেই তার বাবাকে (সাংবাদিক রানা) গালাগাল শুরু করেন জানিয়ে মাহিন বলে, ‘একপর্যায়ে তিনি (ইউএনও) আমাকে বলেন, “তুইও কি বাপের মতো চোর সাংবাদিক হবি”। পরে তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে বাবাকে আটক করে। পরে ইউএনওর নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. শিহাবুল আরিফ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাবাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। এ সময় বাবার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।’

মাহিন আরও বলে, ‘তখন আমার খুব ভয় করছিল। ভয়ে আমি কিছু বলতে পারছিলাম না। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না। আমার খুব কান্না পাচ্ছিল। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমার বাবাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। সেই সাজা প্রত্যাহার করে বাবার মুক্তি চাই।’

অবশ্য ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিনের ভাষ্য, রানা তথ্য চেয়ে আবেদন করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তখনই তথ্য চান। তবে তথ্য দেওয়ার জন্য হাতে ২০ দিন সময় আছে বলে রানাকে জানান। তখন গোপনীয় সহকারীর (সিএ) কাছে থাকা ওই তথ্যের ফাইল টানাটানি শুরু করেন রানা। তিনি অসদাচরণ করে অফিসের পরিবেশ নষ্ট করেছেন। তাই তিনি সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে বলেছেন।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক আবদুল্লাহ আল খাইরুম বলেন, ‘পিতা যেমনই হোক, সন্তানের কাছে পিতার সম্মান সত্যিকার অর্থেই অনেক বড়। ওই ঘটনার সময়ে আমি শেরপুরে ছিলাম না, ঢাকায় ডিসি সম্মেলনে ছিলাম। যদি থাকতাম হয়তোবা এমনটা হতো না। আমার কাছে আপিলের সুযোগ আছে। রানার পরিবার আপিল করলে সে ক্ষেত্রে আমি জামিনের বিষয়টা বিবেচনা করব।’

শফিউজ্জামান রানাকে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন এবং নেতারা নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছেন। পাশাপাশি রানার নিঃশর্ত মুক্তি এবং এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here