ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে, মশা পাল্টাচ্ছে চরিত্র

0

আমরা আগে বলতাম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে উচ্চ তাপমাত্রা থাকে, শরীর ব্যথা, গিরায় গিরায় ব্যথা, মাথা ব্যথা বা চোখে ব্যথা থাকে। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে জ্বর আপনাআপনি কমে যায়। এ সময় প্ল্যাটিলেট কমে এবং রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে। ব্রাশ করতে গিয়ে দাঁতের গোড়া থেকে বা নাক থেকে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা থাকে।

তবে এবারের চিত্রটা অনেকটাই ভিন্ন। দেখা যাচ্ছে, জ্বরের তাপমাত্রা খুব বাড়ছে না, শরীরের ব্যথাও তেমন হচ্ছে না। সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা। অথচ এক দুইদিন পর শরীরের অবস্থার অবনতি ঘটছে। রোগীর পাল্স পাওয়া যায় না, ব্লাড প্রেসার কমে যায়, প্রস্রাব হয় না, কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি রোগী অজ্ঞানও হয়ে যাচ্ছে! এটাকে বলে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। এটা সবচেয়ে ভয়াবহ!

এক সময় বলতাম, এডিস মশা শুধুমাত্র পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানিতে হয়, এখন দেখা যাচ্ছে নোংরা পানিতেও মশা ডিম পাড়তে পারে। আগে জানতাম, এডিস মশা শুধু দিনে কামড়ায়। তাই রোগীদের বলতাম, দিনের বেলা মশারি টানিয়ে ঘুমাতে। কিন্তু এখন দেখি, এ মশা দিনে-রাতে দুই সময়েই কামড়াতে পারে। আগে সাধারণত জানতাম বর্ষার বা বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ডেঙ্গুর সম্পর্ক আছে। এখন দেখি সারাবছরই ডেঙ্গু হতে পারে। যেমন এবার জানুয়ারি থেকে সারা বছরই ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি শীতকালেও এর প্রভাব দেখা গেছে। যদিও বৃষ্টিপাতের সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে।

তবে কোথাও জমা পানি থাকলেই কিন্তু এটি ডিম পাড়ে। সে কারণে বলাই যায় যে, ডেঙ্গু তার লক্ষণ বদলাচ্ছে এবং মশা তার চরিত্র বদলাচ্ছে। যেহেতু এই সময় ডেঙ্গু হচ্ছে এবং করোনাও হচ্ছে তাই একটাই উপদেশ; জ্বর-ঠান্ডা-মাথা ব্যথা দেখা দিলে দ্রুত ডেঙ্গুর টেস্টটা করিয়ে ফেলবেন। যত দ্রুত ধরা পরবে, তত দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে জটিলতাগুলো এড়ানো সম্ভব। এ নিয়ে অবহেলা করলে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে ভোগার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন অনেক সময়ই আমাদের কিছু করা থাকে না। তখন আইসিইউতে ভর্তি হতে হয়। তাছাড়া এর তো কোনো নির্দিষ্ট এন্টি ভাইরাস বা ওষুধ নাই।

ফলে এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে সতর্ক থাকতে হবে এবং কিছুতেই অবহেলা করা যাবে না। আর ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে বেশি করে তরল খাবার খেতে হবে। যেমন পানি, ডাব, শরবত বেশি বেশি খেতে হবে। সাথে জ্বর উঠলে বা ব্যথা থাকলে শুধু প্যারাসিটামল খেতে হবে। অন্য কোনো ব্যথানাশক খাবেন না, নিজেরা কোনো এন্টিবায়োটিক কিনে খাবেন না। ডাক্তার পরামর্শ দিলে তবেই অন্য ওষুধ খাবেন। যারা বৃদ্ধ বা যাদের অন্যান্য রোগ আছে, তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়া উচিত।

লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here