ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার অর্থ কি, ইউক্রেনের সামনে ঘোর বিপদ?

0
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার অর্থ কি, ইউক্রেনের সামনে ঘোর বিপদ?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে বৈঠকে বসার কথা ছিলো। তবে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। কারণ, ট্রাম্প প্রস্তাব করেছিলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বর্তমান ফ্রন্ট লাইনে একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে স্থগিত করা হোক।

এই বৈঠকের কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই, এমন ইঙ্গিত দিয়ে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, আমি একটি ব্যর্থ বৈঠক চাই না। আমি সময় নষ্ট করতে চাই না, তাই দেখব কী হয়।

ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে বড় এবং মারাত্মক এই সংঘাত ৪২ মাস ধরে চলছে। যাতে উভয় পক্ষে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। দুই মাস আগে আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিনের মধ্যে একটি দ্রুত-আয়োজিত শীর্ষ বৈঠকও কোনো ফল দিতে পারেনি। সেই ব্যর্থতার পর শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার এটি সর্বশেষ ঘটনা।

আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার মূল কারণ হল যুদ্ধ স্থগিত করার ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রতি রাশিয়ার অনমনীয়তা। রবিবার ট্রাম্প রাশিয়াকে বর্তমান যুদ্ধরেখা বরাবর যুদ্ধ স্থগিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমার বক্তব্য হলো তাদের এখনই যুদ্ধরেখায় থেমে যাওয়া উচিত, বাড়ি ফিরে যাওয়া উচিত, মানুষ হত্যা বন্ধ করা উচিত এবং কাজ শেষ করা উচিত। তিনি প্রস্তাব করেন যে বর্তমানে রাশিয়া-দখলকৃত এলাকা (যা তার মতে, ইউক্রেনের প্রায় ৭৮ শতাংশ) যেভাবে আছে সেভাবে থাকুক এবং ভবিষ্যতের বৈঠকে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। লক্ষণীয় যে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ ইউরোপীয় নেতারা মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের এই প্রস্তাবকে শক্তিশালীভাবে সমর্থন করে বলেছিলেন যে আলোচনার সূচনা বিন্দু হওয়া উচিত বর্তমান যোগাযোগ রেখা। তারা রাশিয়াকে শান্তি প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার জন্য অভিযুক্ত করেন।

ট্রাম্পের প্রস্তাবের পরদিনই সোমবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যুদ্ধ স্থগিত করার সর্বশেষ প্রস্তাবে রুশ নেতা রাজি হবেন না। রাশিয়ার অবস্থান পরিবর্তন হয়নি বলে জানান তিনি। রাশিয়ার দাবি হলো, ইউক্রেনকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র করা এবং যুদ্ধের সময় রাশিয়া যে সব ভূখণ্ড দখল করেছে। সেগুলোর ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা। মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, রাশিয়া ব্যক্তিগতভাবে আমেরিকাকে বার্তা পাঠিয়েছে যে তারা শুধু দখলকৃত অংশ নয় বরং ইউক্রেনের সমগ্র ডনবাস অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ চায়। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ আলাস্কা শীর্ষ বৈঠকের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন যে সংঘাতের প্রাথমিক কারণগুলি দূর করার পরেই রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করতে রাজি হবে। যার অর্থ ইউক্রেনকে নিরস্ত্র করা এবং যুদ্ধের সময় হারানো অঞ্চলগুলির দখল মেনে নেওয়া। এই শর্তগুলি কিয়েভের কাছে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।

আলোচনার এই পতন আপাতত আরও অনিশ্চয়তা ডেকে এনেছে। পরিকল্পিত শীর্ষ বৈঠক ভেঙে যাওয়ার অর্থ হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের কাছে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের সরবরাহ চেয়ে সামরিক সমর্থন বাড়ানোর জন্য চাপ দিলেও সে বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। ট্রাম্প আবারও ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্রদেরকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মোটকথা, দুই পক্ষের মধ্যে মৌলিক মতপার্থক্যের কারণে শান্তি আলোচনা আবারও ভেস্তে গেল। রাশিয়ার পক্ষ থেকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া এবং ইউক্রেনকে নিরস্ত্র করার বিষয়ে কোনো নমনীয়তা না দেখা যাওয়ায় ইউরোপের সবচেয়ে বড় এই যুদ্ধের সমাপ্তি কবে ঘটবে, তা নিয়ে গভীর সংশয় তৈরি হলো।

সূত্র: আল জাজিরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here