প্রথম মেয়াদে যেখানে শেষ করেছিলেন, এবার যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় বসার আগেই এবারও তিনি গ্রিনল্যান্ড কব্জাগত করার কথা জানালেন। আর তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনানুষ্ঠানিক দৌড়ঝাঁপও শুরু হয়েছে।
ট্রাম্প সম্প্রতী বলেছেন, গ্রিনল্যান্ড নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য শুল্ক আরোপ বা সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে প্রস্তুত তিনি।
এর প্রতিক্রিয়ায় গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিউট এগেদে সোজা বলে দিয়েছেন, ‘গ্রিনল্যান্ডের মালিক গ্রিনল্যান্ডবাসী।’
যুক্তরাজ্য, জার্মানি আর ফ্রান্সও ট্রাম্পের এমন কাজের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। গ্রিনল্যান্ড ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ডেনমার্কের একটি উপনিবেশ ছিল। বর্তমানে এটি ডেনমার্কের অধীনে থাকা একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল।
ট্রাম্পের এমন আচরণে গ্রিনল্যান্ডবাসীও ক্ষুব্ধ।
গ্রিনল্যন্ডের বাসিন্দা ওলে হোর্থ বলেছেন, আমাদের দেশ বিক্রির জন্য নয়। ট্রাম্প অনেক কিছুই বলেন, যা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু এবারের ব্যাপারটি বেশ ভীতিকর। ন্যুক বিমানবন্দরে “ট্রাম্প”লেখা বোয়িংয়ের ৭৫৭ মডেলের একটি উড়োজাহাজ (মঙ্গলবার ট্রাম্প জুনিয়রের সফরের সময়) দেখে কী ঘটছিল, তা আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। বিশ্বাস করতে পারিনি এসব কী ঘটছে। একেবারে আজব পরাবাস্তব একটা অভিজ্ঞতা।
পেশায় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ওলে রাজধানী ন্যুকের বাসিন্দা। তার মতে, গ্রিনল্যান্ডে সামরিক শক্তি প্রয়োগ মানে বাকি ন্যাটো সদস্যদের সঙ্গেও যুদ্ধ শুরু করা। আর ডেনমার্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপ করা মানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাকি সব দেশের ওপরও তা চাপিয়ে দেয়া।
তবে আন্তঃবিভাজনের ভয় পাচ্ছেন ওলে হোর্থ। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো একই ধারার ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডেও বিভাজন সৃষ্টি করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানেও এরই মধ্যে লোকজনকে মেগা (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) ক্যাপ পরতে দেখছি। আমার ভয় হয়, তারা অপপ্রচার শুরু করবেন এবং আমাদের নির্বাচন ও আমরা কীভাবে দেশ চালাব, সেটাকে প্রভাবিত করবেন।’
মনিতসক শহরের বাসিন্দা শিক্ষার্থী ফ্রান্স এইচ পিটারসেন (২১) বলেছেন, ‘ট্রাম্পের উল্লেখযোগ্য প্রভাবের কারণে শুরুর দিকে আমি অস্বস্তি করেছিলাম। কিন্তু গ্রিনল্যান্ডের সরকার যখন দৃঢ়ভাবে বলল যে গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয় এবং কখনো তা হবে না, তখন আমি আশ্বস্ত হলাম।’
তিনি বলছেন, স্বাধীনতার বিষয় নিয়ে গ্রিনল্যান্ডবাসী বিভক্ত। আর সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারেন ট্রাম্প।
ন্যুকবাসী প্যাট্রিক আব্রাহামসেন (৪৫) একজন অনুসন্ধান ও উদ্ধারকর্মী। তিনি বলেছেন, উচ্চপদস্থ অনেক ব্যক্তি এখন গ্রিনল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ডের জনগণকে নিয়ে এমনভাবে কথা বলছেন, যেন এসব কোনো বস্তু, সম্পত্তি বা কেনাবেচার সামগ্রী। এটা আমাদের কণ্ঠস্বর এবং মানুষের পরিচয় ছিনিয়ে নিচ্ছে।