ট্রাম্পের বেশির ভাগ শুল্ক অবৈধ: মার্কিন আদালত

0
ট্রাম্পের বেশির ভাগ শুল্ক অবৈধ: মার্কিন আদালত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধিকাংশ শুল্ক আরোপকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন দেশটির ফেডারেল আপিল আদালত।

শনিবার (৩০ আগস্ট) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই আদেশ ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে এবং আইনি দ্বন্দ্বের শঙ্কা তৈরি করেছে। রায়ে চীন, মেক্সিকো, কানাডাসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে আরোপিত বাড়তি শুল্কের বড় অংশকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইউএস কোর্ট অব আপিলস ফর দ্য ফেডারেল সার্কিটের বিচারকদের ৭-৪ ভোটে এ রায় দেওয়া হয়।

ট্রাম্প জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে এই শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যে পদক্ষেপকে ‘আইনের পরিপন্থি ও অবৈধ’ বলেছে আদালত।

অবশ্য ট্রাম্প প্রশাসন যাতে এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারে, সেজন্য ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত রায়টি কার্যকর হবে না বলে জানানো হয়েছে।

এ রায়ের সমালোচনা করে ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে বলেছেন, “এই রায় যদি বহাল থাকে, তাহলে এটি যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেবে।”

তিনি লিখেছেন, “চরম পক্ষপাতদুষ্ট একটি আপিল আদালত আজ ভুলভাবে বলেছে যে- ‘আমাদের শুল্ক সরিয়ে ফেলা উচিত’, কিন্তু তারা জানে আমেরিকাই শেষ পর্যন্ত জিতবে।

“এই শুল্ক যদি কখনও বাতিল হয়ে যায়, তবে তা দেশের জন্য পুরোপুরি বিপর্যয়কর হবে। এই সিদ্ধান্ত আমাদের আর্থিকভাবে দুর্বল করে ফেলবে; কিন্তু আমাদের শক্তিশালী হওয়া দরকার।”

জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘অস্বাভাবিক ও অসাধারণ হুমকির’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। ট্রাম্পের ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অসমতা তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি, এ কারণে তিনি বাণিজ্যের ওপর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন।

কিন্তু আদালত বলেছে, শুল্ক আরোপ করা প্রেসিডেন্টের এখতিয়ারে পড়ে না; বরং শুল্ক ঠিক করা কংগ্রেসের ‘প্রধান দায়িত্বের একটি’।

১২৭ পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়েছে, জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনে কোথাও ‘শুল্ক’ শব্দের উল্লেখ নেই এবং এতে এমন কোনো কাঠামো নেই- যা প্রেসিডেন্টকে শুল্ক আরোপের অবারিত ক্ষমতা দেয়।

আদালত বলছে, কর ও শুল্ক আরোপের ক্ষমতা কংগ্রেসের অধিকারেই রয়ে গেছে এবং এই ক্ষমতার ওপর জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে না।

রায়ে বলা হয়, ১৯৭৭ সালে কংগ্রেস যখন এই আইন পাস করে, তখন তারা প্রেসিডেন্টকে সীমাহীন শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেনি।

ছোট ব্যবসায়ী ও দেশটির একটি রাজ্য জোটের দুই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় ঘোষণা করা হয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত এপ্রিলে এক নির্বাহী আদেশে প্রায় সব দেশের ওপর ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক এবং বহু দেশের ওপর চড়া শুল্ক চাপিয়ে দেন। ট্রাম্প সেই দিনটিকে ‘অন্যায্য বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে মুক্তির দিন’ বলেও বর্ণনা করেছিলেন। এরপরই মামলা দুটি দায়ের করা হয়।

এর আগে গত মে মাসে নিউ ইয়র্কের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত ট্রাম্পের শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করে, তবে আপিল প্রক্রিয়া চলায় সেটি এখনো কার্যকর হয়নি।

শুক্রবারের রায়ে চীন, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর আরোপিত শুল্ককেও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও এই শুল্কগুলোর পেছনে ট্রাম্প বলেছিলেন, মাদকদ্রব্য দ্রব্য আমদানি ঠেকাতে এ পদক্ষেপ প্রয়োজন। তবে প্রেসিডেন্টের অন্য এখতিয়ারের আওতায় স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর বসানো শুল্কের ক্ষেত্রে এ রায় প্রযোজ্য হবে না।

রায়ের আগে হোয়াইট হাউসের আইনজীবীরা বলেন, শুল্ক বাতিল হলে ১৯২৯ সালের মতো আর্থিক মন্দা, শেয়ারবাজার ধস এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

তারা একটি চিঠিতে লেখেন: “জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের আওতায় প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপের ক্ষমতা হঠাৎ করে বাতিল করা হলে- আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, পররাষ্ট্র নীতি ও অর্থনীতির ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে।”  সূত্র: বিবিসি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here