ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডের ৩১ আসনের পার্লামেন্টের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৭২টি ভোটকেন্দ্রে ১১ ঘন্টা ধরে চলে ভোটগ্রহণ। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) স্থানীয় সময় রাত ৮টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। নির্বাচনের ফলাফল আগামীকাল বুধবার সকালে পাওয়া যেতে পারে।
বিবিসি ও আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার আগ্রহ প্রকাশ করার পর বিশ্ব আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে বিশ্বের বৃহত্তম এই দ্বীপটি।
গ্রিনল্যান্ড প্রায় ৩০০ বছর ধরে ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণে। ডেনমার্কের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দূরে দ্বীপটির অবস্থান। নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো পরিচালনা, দেখভালের দায়িত্ব দ্বীপটির স্বায়ত্তশাসিত কর্তৃপক্ষ পালন করে। আর দ্বীপটির পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষানীতি-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয় কোপেনহেগেনে। স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপটির ৩১ আসনের পার্লামেন্টে চার বছর অন্তর অন্তর নির্বাচন হয়।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে, ট্রাম্পের দখল নেওয়ার হুমকির মধ্যে গ্রিনল্যান্ডে ভোট অনুষ্ঠিত হলো।
গ্রিনল্যান্ডের একটা বড় অংশের মানুষ ডেনমার্ক থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা চাইছেন। দেশটির অধিকাংশ মানুষের আশা, এই নির্বাচনের ফলে স্বাধীনতার পক্ষে একটা শক্তিশালী জনমত তৈরি হতে পারে।
‘যেকোনোভাবে হোক’ বিশাল আর্কটিক দ্বীপটি নিজের হাতে পেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে বারবার তার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন তিনি। যার ফলে ৫৭ হাজার গ্রিনল্যান্ডবাসীর মধ্যে নির্বাচনটি ব্যতিক্রমী ভাবধারা সৃষ্টি করেছে।
অতীতে গ্রিনল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচনের ভোট খুব কমই বহির্বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তবে এই নির্বাচন ভিন্ন আবহ সৃষ্টি করেছে।
রবিবার রাতে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডবাসীদের ‘বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের) অংশ হতে’ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি তার সামাজিক নেটওয়ার্ক ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে তাদের ‘ধনী’ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
এ বিষয়ে জানুয়ারিতে প্রকাশিত সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে যে, ৮৫ শতাংশ গ্রিনল্যান্ডবাসী ট্রাম্পের এ ধারণার বিরোধী। তারা ট্রাম্পের এ আমন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
৫৮ বছর বয়সী জাহাজ মেরামতকারী রেনে ওলসেন সোমবার এএফপিকে বলেন,‘আমরা আমেরিকান হতে চাই না।’
তবে ট্রাম্পের বক্তব্য নির্বাচনী প্রচারণায় প্রভাব ফেলেছে। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মুট এগেডে তার বক্তব্যকে ‘অপ্রত্যাশিত’ অভিহিত করেছেন। ডেনমার্কের সঙ্গে দ্বীপটির ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলমান রয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্য এ বিতর্ককে আরো উসকে দিয়েছে।
এই দ্বীপটির মোট ৫৬ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪৪ হাজার। পার্লামেন্টে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য ১৬ আসন পেতে হয়। আজকের নির্বাচনে ছয়টি দলের প্রার্থীরা লড়ছেন।
গ্রিনল্যান্ডে বর্তমানে ক্ষমতায় আছে দুটি দলের জোট সরকার। দল দুটি হলো কমিউনিটি অব দ্য পিপল (আইএ) ও ফরোয়ার্ড (এস)। গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুট এগেদে। যে ছয়টি দল নির্বাচনে লড়ছে, তার মধ্যে পাঁচটিই ডেনমার্ক থেকে গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষে। কৌশলগত অবস্থানের পাশাপাশি অব্যবহৃত খনিজ সম্পদের কারণে দ্বীপটির ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নজর পড়েছে। তিনি তার ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালে গ্রিনল্যান্ড কেনার ধারণাটি প্রথম সামনে এনেছিলেন।