সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শেষ অর্থ বছরে ( ২০২৩ সালের ১অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) দৈনিক গড়ে ৩১০ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমকালে আরো ৪০৯জনকে গ্রেফতার করে ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঢাকঢোল পেটানোর পর গত দুদিনে (২৫ জানুয়ারি সকাল পর্যন্ত) মাত্র ৫০০ জনকে গ্রেফতার এবং ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে ৩৭৩ জনকে।
সরকারি সূত্রে প্রাপ্ত এ তথ্য অনুযায়ী ডেমোক্র্যাট আমলেও অপরাধে লিপ্ত অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার অভিযান থেমে থাকেনি। যদিও গত নির্বাচনের আগে সকল প্রচারাভিযানেই ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ রিপাবলিকানরা হরদম জো বাইডেন ও তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, ডেমোক্র্যাটরা অপরাধী অভিবাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে যুক্তরাষ্ট্রকে। আর এমন অভিযোগের কারণেই গত নির্বাচনে ট্রাম্পের পাল্লা ভারি হয় এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর জনগণের সে প্রত্যাশার পরিপূরক হিসেবেই সাঁড়াশি অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ নির্দেশের টার্গেট হচ্ছে সারা আমেরিকায় কাগজপত্রহীন এক কোটি ১৭ লাখ অভিবাসী।
নিউইয়র্ক, লসএঞ্জেলেস, সানফ্রান্সিসকো, ফিলাডেলফিয়া, বস্টন, ডেনভার, আটলান্টা, সিয়াটল, মায়ামি, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগোসহ বিভিন্ন সিটিতে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্টরা মাঠে নেমেছেন। গ্রেফতার অভিযান শুরু হওয়ার পরই সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে গোটা কম্যুনিটি। বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট, গ্রোসারি স্টোর এবং নিউজ স্ট্যান্ডসহ খুচরা অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সংকট দেখা দিয়েছে। অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত সংগঠন এবং আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে কঠোর পরিশ্রমী মানুষের পেটে লাথি মারার মত পরিস্থিতি তৈরির জন্যে। একইসাথে তারা অভিযোগ করেছেন যে, নিজ দেশে নিরাপত্তার অভাবে কিংবা সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় আমেরিকায় পাড়ি জমিয়ে নতুন সংকটে নিপতিত হয়েছেন।
নিউইয়র্কে আগে থেকেই ৫ লাখের অধিক অবৈধ অভিবাসী ছিলেন। গত চার বছরে সে সংখ্যায় যোগ হয়েছে আড়াই লাখ। এসব অভিবাসীর অনেকেই রেস্টুরেন্ট, নিউজ স্ট্যান্ড অথবা গ্রোসারি স্টোরে কাজ করছে। ট্রাম্পের অভিযান শুরু হওয়ায় সকলেই গা ঢাকা দিয়েছে। এরফলে রেস্টুরেন্টসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। কারণ, সিটিজেনদের নিয়োগ করলে ন্যূনতম মজুরি ঘন্টা হিসেবে বেতন (১৬.৫০ ডলার করে) দিতে হবে। অবৈধদের তার অর্ধেকেরও কম দিয়েই চালিয়ে নেয়া যায়।
একইভাবে লসএঞ্জেলেস সিটিতেও সাড়ে ৯ লাখের মত অবৈধ অভিবাসী আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে জানা গেছে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ফ্লোরিডার রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান মারিয়া সালাজার অভিবাসী তাড়ানোর ঢালাও অভিযান বন্ধের জন্যে কংগ্রেসে বিল পাশের দাবি জানিয়েছেন। শুধু গুরুতর অপরাধে দণ্ডিতরা ছাড়া অন্য কাউকে গ্রেফতার থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন নির্দেশনার কথাও তিনি বলেছেন। এ আহবানে হোয়াইট হাউজে একটি ই-মেইলও পাঠিয়েছেন বলে শনিবার রাতে জানা গেছে।
আরিজোনার কংগ্রেসওম্যান (ডেমক্র্যাট)ইয়াসামিন আনসারি গভীর উদ্বেগের সাথে বলেছেন যে, ট্রাম্পের এই নির্দেশ জারির পর চিহ্নিত একটি দুর্বৃত্ত চক্র অভিবাসী-সমাজে ফোন করছে এবং গ্রেফতার-অভিযান থেকে রক্ষার অঙ্গীকার করে নগদ ফি চাচ্ছে। আইনগত সুবিধার নিশ্চয়তা দিয়ে এহেন প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছে এবং ইয়াসামিন আনসারির নির্বাচনী এলাকার অনেক মানুষ ইতিমধ্যেই ভিকটিম হয়েছেন। আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী আরিজোনা স্টেটের মোট জনসংখ্যার ১৩.১% হলেন অভিবাসী। এর ৮.৬% কাগজপত্রহীন। এই স্টেটের সিনেটর লিলা অ্যলস্টন (ডেমক্র্যাট) বলেছেন যে, ট্রাম্পের আদেশের পর গোটা কম্যুনিটিতে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক অস্থিরতায় গ্রাস করেছে দিনাতিপাতের আহার জোটানোর অনিশ্চয়তা।
স্কুল, মসজিদ-মন্দির-গির্জা, এমনকি হাসপাতালেই অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরফলে কাগজপত্রহীনরা স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন পরিচিত স্থান ত্যাগ করে। কারণ, কর্তৃপক্ষের কাছে পাওয়া ঠিকানাতেই হানা দেয়া হচ্ছে।
অবস্থার ভয়াবহতা বিবেচনা করে কংগ্রেসওম্যান আনসারি ইতিমধ্যেই সহকর্মীগণের সাথে পরামর্শ করেছেন যে, প্রথম মেয়াদের মত এবারও “ট্রাম্প মুসলিন ব্যান” আদেশ জারি করতে পারেন। তাই আগে থেকেই কংগ্রেসকে সরব রাখতে হবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে যাওয়া একটি সামরিক বিমানকে মেক্সিকো অবতরণের অনুমতি দেয়নি। শুক্রবার মার্কিন সামরিক বিমান দুটি ফ্লাইটে প্রায় দেড়শ অবৈধ অভিবাসীকে গুয়াতেমালায় নামিয়ে আসে; কিন্তু অবতরণের অনুমতি না মেলায় সি-১৭ পরিবহন বিমান মেক্সিকোতে নামানোর পরিকল্পনা কার্যকর করা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর দুই কর্মকর্তা ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন।