ট্যাপ আউটে থামল ম্যাচ, রেসলিং থেকে জন সিনার বিদায়

0
ট্যাপ আউটে থামল ম্যাচ, রেসলিং থেকে জন সিনার বিদায়

রেসলিংয়ের ইতিহাসে খুব কম বিদায়ই এতটা আবেগঘন ও আলোচনার জন্ম দেয়। জন সিনার শেষ ইন-রিং ম্যাচ ঠিক তেমনই একটি মুহূর্ত হয়ে থাকল। দুই দশকের বেশি সময় ধরে ডব্লিউডব্লিউই–তে দর্শকদের বিনোদন দেওয়া, অনুপ্রেরণা জোগানো ও একটি প্রজন্মের সঙ্গে বেড়ে ওঠা এই সুপারস্টারের বিদায়টা হলো নীরব, সংযত এবং অপ্রত্যাশিতভাবে কঠিন।

ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটাল ওয়ান অ্যারেনায় স্যাটারডে নাইটস মেইন ইভেন্টে সিনার শেষ ম্যাচটি শুরু থেকেই আলাদা গুরুত্ব বহন করছিল। গ্যালারির প্রতিটি আসন ভরে গিয়েছিল দর্শকে, যেন সবাই সাক্ষী থাকতে চেয়েছে ইতিহাসের একটি শেষ অধ্যায়ের।

প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিলেন গুন্থার। যিনি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ভয়ংকর (হিল কারেক্টার) রেসলারদের একজন। শুরু থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতেই।

২৫ মিনিটের লড়াইয়ে জন সিনা তার চেনা দৃঢ়তা ও অভিজ্ঞতার ছাপ রেখেছিলেন। একাধিকবার সিনা তাঁর ফিনিশার অ্যাটিটিউড অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রয়োগ করে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি দেখা গেছে সুপার এএ বা সুপার সিনা’রও। কিন্তু (যেহেতু এটা স্ক্রিপ্টেড এবং শেষ ম্যাচটা যাতে সিনা হেরে নতুন প্রজন্মকে উপরে তুলে দিতে পারেন) এ কারণে গুন্থারের শারীরিক শক্তি ও কৌশলের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয়। স্লিপার হোল্ডে ট্যাপ আউট করে পরাজয় মেনে নেওয়াটা ছিল সিনার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বিস্ময়কর দৃশ্যগুলোর একটি। ২০ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে এই প্রথম। এর আগে কখনও জন সিনা ট্যাপ আউট করেনি। এর মাধ্যমে সিনা যেনো এই মেসেজই দিলেন যে, ইটস ওকে টু গিভ আপ। 

এই পরাজয়কে অনেকেই সহজে নিতে পারেননি। দর্শকদের একটি অংশ হতবাক, কেউ কেউ ক্ষুব্ধও হয়েছেন। তবে সিনার আচরণ ছিল বরাবরের মতোই শান্ত ও সংযত। ম্যাচ শেষে রিংয়ে দাঁড়িয়ে আবেগ সামলানোর চেষ্টা, ক্যামেরার দিকে স্যালুট আর দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ।

সব মিলিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, এই বিদায় শুধু একটি ম্যাচের ফল নয়, বরং একটি অধ্যায়ের পরিণত সমাপ্তি।

সিনার শেষ ম্যাচে রিংয়ের পাশে উপস্থিত ছিলেন তার ক্যারিয়ারের বহু পরিচিত মুখ। কার্ট অ্যাঙ্গেল, মার্ক হেনরি, রব ভ্যান ড্যাম, ট্রিশ স্ট্রাটাসদের মতো কিংবদন্তিরা। আবার দ্য রক ও কেইনের মতো তারকারা ভিডিও বার্তায় শুভকামনা জানিয়েছেন। এসব উপস্থিতি প্রমাণ করে, জন সিনা কেবল একজন সফল রেসলারই নন, তিনি এই ইন্ডাস্ট্রির এক সম্মানিত অধ্যায়।

২০০২ সালে ডব্লিউডব্লিউইতে অভিষেকের পর সিনা হয়ে উঠেছিলেন এক প্রতীক। শক্তি, ধৈর্য আর ‘নেভার গিভ আপ’ মানসিকতার। ১৭ বার বিশ্ব শিরোপা জয়, অসংখ্য স্মরণীয় ফিউড ও ম্যাচ তাকে নিয়ে গেছে হাল্ক হোগান, স্টোন কোল্ড স্টিভ অস্টিন ও দ্য রকের কাতারে। শেষ ম্যাচে জয় না পেলেও তার ক্যারিয়ারের মূল্যায়ন কখনোই একটি হারের ওপর নির্ভর করবে না।

রেসলিং থেকে জন সিনার বিদায় মানে শুধু একজন রেসলারের অবসর নয়। এটি একটি প্রজন্মের স্মৃতি, অনুপ্রেরণা ও আবেগের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি। হারের মধ্য দিয়েই তার শেষটা হওয়ায় হয়তো অনেকের কষ্ট থাকবে, কিন্তু ইতিহাসে জন সিনা থাকবেন একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই রিংয়ে এবং রিংয়ের বাইরেও।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here