কক্সবাজারের টেকনাফে পৃথক অভিযান চালিয়ে ২ লক্ষ ১০ হাজার ইয়াবা ও ৩৬০ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ সময় এক যুবককে আটক করা হয়। টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোঃ মহিউদ্দীন আহমেদ (বিজিবিএমএস) গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
বৃহস্পতিবার টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়ন কর্তৃক পরিচালিত পৃথক তিনটি অভিযানে একজন আসামিসহ ২ লক্ষ ১০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ৩৬০ ক্যান আন্দামান গোল্ড বিয়ার উদ্ধার করা হয়।
এরপর টহলদল উল্লেখিত স্থানে পৌঁছে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করে চোরাকারবারীদের ফেলে যাওয়া গামছা দিয়ে মোড়ানো দুটি প্লাষ্টিকের বস্তা উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত বস্তার ভিতর থেকে ২ লক্ষ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট (মালিকবিহীন অবস্থায়) জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে টহলদল কর্তৃক উক্ত এলাকায় ভোর পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হলেও কোন চোরাকারবারী কিংবা তাদের সহযোগীকে আটক করা সম্ভব হয়নি চোরাকারবারীদেরকে সনাক্ত করার জন্য অত্র ব্যাটালিয়নের গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এদিকে একইদিনে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় যে, টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ দমদমিয়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ বিআরএম-৯ হতে আনুমানিক দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে জালিয়ারদ্বীপ নামক স্থানে মাদকদ্রব্যের একটি চালান মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে বালুর নীচে লুকায়িত রয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে দমদমিয়া বিওপির একটি চোরাচালান প্রতিরোধ টহলদল বর্ণিত স্থানে গমন করে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করে সন্দেহভাজন একজন ব্যক্তিকে ঘোরাফেরা অবস্থায় দেখতে পায়।
পরবর্তীতে টেকনাফ জাদিমোড়া ২৭ নম্বর ক্যাম্পের ব্লক-বি/৪ এর বাসিন্দা মোঃ হোসেনের ছেলে মো: আব্দুর শুক্কুরকে (১৯) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জালিয়ারদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব পার্শ্বে বালুর নীচে প্লাষ্টিকের পলিব্যাগ দিয়ে মোড়ানো একটি পোটলা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত পোটলা থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়।
আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, উক্ত ইয়াবার চালান মিয়ানমার হতে বাংলাদেশে এনে দুইজন পলাতক আসামির নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য ৩০ হাজার টাকা চুক্তির বিনিময়ে মিয়ানমারের শোয়ারদ্বীপ থেকে সাঁতরিয়ে নাফনদীর শূন্য লাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশের জালিয়ারদ্বীপে বর্ণিত স্থানে পলাতক আসামীদের নিকট ইয়াবার চালান বুঝিয়ে দেয়ার নিমিত্তে লুকিয়ে রাখে।
এছাড়া অপরদিকে একইদিনে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ শাহপরীরদ্বীপ বিওপির একটি চোরাচালান প্রতিরোধ টহলদল বিআরএম থেকে আনুমানিক ৫০০ গজ দক্ষিণ দিকে জালিয়াপাড়া নামক এলাকায় নাফনদীর কিনারায় নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এ সময় টহলদল ৪-৫ জন ব্যক্তিকে নাফনদী পার হয়ে বা কাঁধে বস্তা নিয়ে বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন কেওড়া বাগানের দিকে আসতে দেখে এবং তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় টহলদল তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে। উক্ত ব্যক্তিরা দূর থেকে বিজিবি টহলদলের উপস্থিতি অনুধাবন করা মাত্রই তাদের কাঁধে থাকা বস্তাগুলো ফেলে দিয়ে কেওড়া বাগানের ভিতর দিয়ে নাফ নদীতে লাফিয়ে মিয়ানমারের দিকে পালিয়ে যায়।
এরপর টহলদল উল্লেখিত স্থানে পৌঁছে তল্লাশী অভিযান পরিচালনা করে ৫টি প্লাষ্টিকের বস্তা উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত বস্তার ভিতর থেকে ৩৬০ ক্যান আন্দামান গোল্ড বিয়ার (মালিকবিহীন অবস্থায়) জব্দ করা হয়। উক্ত স্থানে অন্য কোন অসামরিক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি বিধায় চোরাকারবারীদের সনাক্ত করাও সম্ভব হয়নি।
তিনি আরো জানান, আটককৃত আসামি রোহিঙ্গা এবং পলাতক আসামিদের (বাংলাদেশী নাগরিক) এর বিরুদ্ধে ইয়াবা ট্যাবলেট বহন ও পাচারের দায়ে নিয়মিত মামলার মাধ্যমে টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও উদ্ধারকৃত মালিকবিহীন ইয়াবা এবং বিয়ারগুলো বর্তমানে ব্যাটালিয়ন সদরে জমা রাখা হয়েছে।