ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য চীনে স্থানান্তরের অভিযোগে টিকটককে ৫৩০ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার) জরিমানা করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, চীনা কর্তৃপক্ষের হাত থেকে ওইসব তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছে টিকটক।
ডাবলিন থেকে এএফপি জানায়, আয়ারল্যান্ডের তথ্য সুরক্ষা কমিশনের (ডিপিসি) তদন্তে উঠে এসেছে, টিকটক আগে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেছে যে, ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের কিছু তথ্য চীনে হোস্ট করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অন্যতম বৃহত্তম এই জরিমানার সিদ্ধান্ত জানায় ইইউ।
২০২৩ সালে শিশুদের তথ্য প্রক্রিয়াকরণে ইইউ নিয়ম ভঙ্গের দায়ে টিকটককে ৩৪৫ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করেছিল ডিপিসি। ইউরোপে টিকটকের সদরদপ্তর আয়ারল্যান্ডে হওয়ায় এই দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাই মেটা, গুগল, এক্সসহ একাধিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করে।
ডিপিসির উপকমিশনার গ্রাহাম ডয়েল বলেন, চীনে অবস্থানরত কর্মীরা ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের যেসব তথ্যে দূরবর্তীভাবে প্রবেশ করেছে, সেসব তথ্য ইইউয়ের নিশ্চয়তাপ্রাপ্ত নিরাপত্তার সমতুল্য সুরক্ষা পাচ্ছে, তা প্রমাণ, যাচাই ও নিশ্চিত করতে টিকটক ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, টিকটক চীনা সন্ত্রাসবিরোধী ও গোয়েন্দাবিরোধী আইনসহ এমন কিছু আইন স্বীকার করেছে, যেগুলো ইইউ মানদণ্ড থেকে স্পষ্টভাবে বিচ্যুত এবং এসব আইনের মাধ্যমে চীনা কর্তৃপক্ষ ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের তথ্য চেয়ে বসতে পাওে, এ সম্ভাবনাকেও আমলে নেয়নি তারা।
টিকটকের ইউরোপীয় প্রতিনিধি ক্রিস্টিন গ্রাহন বলেন, চীনা কর্তৃপক্ষ ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের তথ্য চায়নি এবং আমরা কোনো তথ্য দেইনি। আমরা এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নই এবং আপিল করব।
ডিপিসির মতে, সাধারণ তথ্য সুরক্ষা বিধিমালা (জিডিপিআর) অনুযায়ী ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য চীনে স্থানান্তরের মাধ্যমে আইন লঙ্ঘন করেছে টিকটক।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্ল্যাটফর্মটি ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের জানায়নি যে, তাদের তথ্য চীনে পাঠানো হচ্ছে বা চীন থেকে এসব তথ্যে প্রবেশ সম্ভব, এই স্বচ্ছতার অভাবে ৪৫ মিলিয়ন ইউরো অতিরিক্ত জরিমানা করা হয়েছে।
ডিপিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, টিকটককে আগামী ছয় মাসের মধ্যে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম ইউরোপীয় আইন অনুসারে সংশোধন করতে হবে, নইলে চীনে তথ্য সরানো স্থগিত করা হবে।
এই জরিমানা যুক্তরাষ্ট্রেও টিকটকের ওপর চাপ আরও বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৪ সালে মার্কিন কংগ্রেস টিকটকের মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সকে দেশটির বাজারে ব্যবসা চালাতে চাইলে মালিকানা ছেড়ে দিতে আইন পাস করে। যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’দফায় সময় বাড়িয়ে আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত প্ল্যাটফর্মটি বিক্রির সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন।
এছাড়া, ভুল তথ্য, সহিংস বা অশ্লীল কনটেন্ট ছড়ানোর অভিযোগ এবং অস্বচ্ছ অ্যালগরিদম ব্যবহারের কারণেও একাধিক দেশে টিকটক নিষিদ্ধ হয়েছে। পাকিস্তান, নেপাল এবং ফ্রান্সের নিউ ক্যালেডোনিয়ায় বিভিন্ন সময় প্ল্যাটফর্মটি নিষিদ্ধ ছিল।
তবে টিকটক বলছে, তারা ইউরোপে ১২ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগে ‘ক্লোভার প্রকল্প’ চালু করেছে এবং ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের তথ্য সাধারণত নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে সংরক্ষণ করে থাকে।
তবে ২০২১ সালে ডিপিসির তদন্ত শুরুর পর চলতি বছরের এপ্রিলেই টিকটক জানায় যে, কিছু ইউরোপীয় তথ্য চীনে সংরক্ষিত ছিল, যা পরে মুছে ফেলা হয়েছে- এটি প্রতিষ্ঠানটির পূর্ববর্তী দাবির পরিপন্থি।