করোনার সংক্রমণ রোধের অভিপ্রায়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে জারিকৃত ‘টাইটেল ৪২’র অবসান হলো ৩ বছর পর গতকাল ১১ মে বৃহস্পতিবার। এরপরই দক্ষিণের সীমান্ত দিয়ে শুক্রবার ভোর রাতের মধ্যে কমপক্ষে ৮ হাজারের অধিক মানুষ সীমান্ত ফাঁড়ি অতিক্রম করেন। টেক্সাসের এলপাসো সীমান্ত-ফাঁড়িতে ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদনকারিদেরকে নোটিশ ধরিয়ে দিচ্ছেন পছন্দের সিটিতে পৌঁছার ৬০ দিনের মধ্যে ইমিগ্রেশন কোর্টে হাজিরার জন্য।
ট্রাম্প আমলে নির্মিত সীমান্ত-দেয়ালের মধ্যে দুটি প্রবেশ পথ (সীমান্ত ফাঁড়ি) ৪০, ৪২ দিয়ে ঢুকানো হচ্ছে সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশসমূহ থেকে আসা শরনার্থীদেরকে।
এক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন বিভাগের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের একটি নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভিনেজুয়েলা, গুয়াতেমালা, আলসালভেদও, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া প্রভৃতি দেশের বিপদগ্রস্থ নারী-পুরুষেরা শিশু সন্তানসহ ৮ শতাধিক মাইল হেঁটে অথবা যানবাহনে চড়ে মেক্সিকো সীমান্তে জড়ো হয়েছেন। এরাই এখন দলে দলে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকছেন। ক্যালিফোর্নিয়া, আরিজোনা, ওরেগণ, ওয়াশিংটনের সীমান্ত ফাঁড়ির চেয়ে টেক্সাসের এল পাসো দিয়ে সবচেয়ে বেশী মানুষের আগমণ ঘটছে বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন।
লাখো মানুষের স্রোত সামলাতে ইতিমধ্যেই হাজারো সৈন্য-সহ সীমান্ত রক্ষী সতর্কাবস্থায় রয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে ‘টাইটেল ৪২’র মেয়াদ ফুরিয়ে যাবার সময়ে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী আলেজান্দ্রো মেয়রকাস টুইট ভিডিও বার্তায় উল্লেখ করেছেন, আইনী প্রক্রিয়ায় যারা সীমান্ত অতিক্রম করবে না, তারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি না-ও পেতে পারেন। বেআইনী প্রবেশ রোধে ২৪ হাজার সীমান্ত প্রহরির সাথে হাজার হাজার ট্রুপস এবং সীমান্তে কর্মরত ঠিকাদার সজাগ রয়েছে। তারা যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষম। অর্থাৎ সকলকে অনুধাবন করতে হবে যে, সীমান্ত খুলে দেয়া হয়নি। মন্ত্রীর এই বার্তার পরই আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আরেক টুইটে অবিলম্বে এমন প্রক্রিয়া স্থগিতের আহবান জানানো হয়েছে। নিরাপত্তা এবং বাঁচার আশায় যারা ঢুকছে তাদের সাথে নির্দয় আচরণ করা চলবে না।
এর আগেরদিন ১০ মে বর্ডার পেট্রোল চীফ রাউল অরটিজ এক নির্দেশে আগতদের প্রচন্ড ভিড় সামলানোর অভিপ্রায়ে ‘প্যারোল উইথ কন্ডিশন’ নীতি অবলম্বনের কথা জানিয়েছেন সীমান্তে কর্মরতদেরকে। অর্থাৎ এই নোটিশ হাতে নিয়ে পছন্দের সিটিতে পৌঁছার ৬০ দিনের মধ্যে ইমিগ্রেশন কোর্ট/অথরিটির কাছে হাজিরা দিতে হবে। এরপরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঐ বিদেশী/শরনার্থী/অভিবাসীর যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসতি গড়ার অভিপ্রায়ের আবেদন গ্রহণ করবে।
এদিকে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার সাথে সাথে মঞ্জুর হয়নি এমন লাখ লাখ বিদেশীর পরবর্তী শুনানির তারিখ ৪/৫ বছর যাবত ঝুলে রয়েছে। করোনার পরিপ্রেক্ষিতে ঝুলে থাকার মেয়াদ আরো বেড়েছে বলে ইমিগ্রেশন এটর্নীরা জানান। এমন জটে নয়া এসব আবেদনের প্রসেসিংয়ে কত বছর সময় লাগবে-তা নিয়ে সকলেই শংকিত।
উল্লেখ্য, টাইটেল ৪২ বিধি হচ্ছে ১৯৪৪ সালে ‘পাবলিক হেলথ সার্ভিস অ্যাক্ট অব ১৯৪৪’র অংশবিশেষ। কলেরা মহামারির সংক্রমণ রোধে এই বিধিকে ১৮৯৩ সালে কংগ্রেস অনুমোদন দেয়। এ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা পেয়েছেন মহামারিতে আক্রান্ত দেশসমূহের নাগরিকদের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের। এবং এই বিধি তৈরীর পর ট্রাম্প আমলেই প্রথম তার প্রয়োগ ঘটেছে। অভিযোগ করা হয় যে, ইমিগ্র্যান্ট-বিরোধী ট্রাম্পকে করোনা মহামারি আরো কট্টর হবার পথ সুগম করেছিল, যদিও তিনি নিজেই করোনা নিয়ে অনেক তামাশা করেছেন। করোনা নিয়ে অবজ্ঞা-অবহেলা না করলে অনেক আমেরিকানের প্রাণহানী ঘটতো বলে এখন অনেকে বলাবলি করছেন।