অবসান হল জার্মানির পারমাণবিক বিদ্যুৎ যুগের। ইউরোপে জ্বালানি সংকটের মাঝেই শনিবার বন্ধ হল জার্মানির শেষ তিন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ নিয়ে দেশটির রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে।
এ হিসেবে আজ শনিবার বার্লিনের ব্র্যান্ডেনবার্গ গেটের একপাশে পারমাণবিক বিরোধী কর্মীরা ৬০ বছর ধরে চলে যাওয়া যুদ্ধে বিজয় উদযাপন করবে। অন্যদিকে, সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জারি রাখবে বিরোধীরা।
শীতল যুদ্ধের সময় বার্লিনকে বিভক্ত করা প্রাচীরের ব্র্যান্ডেনবার্গ গেট এখন বিভক্ত রাজনৈতিক পক্ষগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। উভয় দলই একে অপরের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক মতাদর্শের অভিযোগ এনেছে।
পরমাণু শক্তির পক্ষে থাকা রক্ষণশীলরা বলছেন, ইউরোপে যুদ্ধ আবার বড় আকার ধারণ করছে। রাশিয়া জ্বালানি ব্যবহার বাদ দেওয়ায় বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। এ সময় কার্বন নির্গমন কম এমন শক্তি ব্যবহারের পরিবর্তে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে সরকার।
রক্ষণশীল সিডিইউ সংসদ সদস্য জেনস স্পান টেলিভিশনে বলেন, এটি জার্মানিতে জলবায়ু সুরক্ষার জন্য একটি কালো দিন।
গ্রিন পার্টি ও বামপন্থীদের যুক্তি, বায়ু বা সৌর শক্তির চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল হওয়ায় পারমাণবিক শক্তিকে আঁকড়ে থাকা অযৌক্তিক। সরকারও বলছে, তিনটি পুরানো পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রাখার জন্য বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজন। এ তহবিল নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলোতে যাওয়া উচিত।
রক্ষণশীলরা নিয়মিত নবায়নযোগ্য শক্তির অবকাঠামো সম্প্রসারণের পদক্ষেপে বাধা দিচ্ছে, এমন অভিযোগও এনেছে গ্রিন পার্টির সংসদ সদস্যরা।
ফুকুশিমা পারমাণবিক বিপর্যয়ের পর ২০১১ সালে তৎকালীন অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের রক্ষণশীল সরকার পরমাণু শক্তি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ওই সিদ্ধান্ত ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়ও হয়। এখন সেই দল রয়েছে বিরোধীর ভূমিকায়।
বর্তমানে জার্মানি তার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে পায়। ফেডারেল পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে ছিল ৪৪ শতাংশ, আর পারমাণবিক শক্তি ছিল মাত্র ৬ শতাংশ। গ্রিন ইকোনমি বিষয়ক মন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেকের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে জার্মানির ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসবে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে।
১৯৬৭ সালে জার্মানির প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়। মাস ছয়-এক আগে পারমাণবিক বিদ্যুৎ থেকে সরে আসার কথা ছিল জার্মানির। পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময়সীমা কিছুটা বাড়ানো হয়। শক্তিশারী বিরোধিতা সত্ত্বেও নিজের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন দেশটির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ।
গত কয়েক দশকে সারা বিশ্বে পারমাণবিক চুল্লি বিরোধী জনমত জোরদার হচ্ছে। সে হিসেবে কমে আসছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যাটাস রিপোর্ট (ডব্লিউএনআইএসআর) অনুসারে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৪১টি দেশে ৪১২টি পারমাণবিক চুল্লি চালু রয়েছে। ২০২১ সালে বৈশ্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশ আসত পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে, ১৯৯৬ সালে ছিল ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সূত্র: সিএনএন, বিবিসি