জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি, ক্ষুব্ধ শরিকরা

0

এক দশকের বেশি সময় পর রাজধানী ঢাকায় জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশ্য সমাবেশ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা তৈরি হয়েছে। যে দলটিকে এত বছর কোনো সভা-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি, নিজেদের কার্যালয়ে সভা করতে গেলেও যাদের গ্রেফতার হতে হয়েছে, সেই দল হঠাৎ কীভাবে রাজধানীতে সমাবেশ করতে পারল, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এ নিয়ে সন্দেহ, প্রশ্ন ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক দলের নেতাদের মধ্যে। তারা বলছেন, এত দিন পর হঠাৎ কী প্রয়োজন হলো যে জামায়াতকে প্রকাশ্যে সমাবেশের অনুমতি দিতে হলো?

আওয়ামী লীগের শরিক দলের নেতারা বলছেন, জামায়াতকে প্রকাশ্যে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার ব্যাখ্যা সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে। যে জামায়াতের নিষিদ্ধকরণের প্রক্রিয়া চলছিল, সেই জামায়াতকে কেন অনুমতি দেওয়া হলো? আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় সাপকে চুমু খেলে যেমন হয়, তেমনি পরিণতি হবে জামায়াতকে নিয়ে খেলার পরিণাম। এ প্রসঙ্গে গত বুধবার জাতীয় সংসদে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য আইনমন্ত্রী মাঝে মাঝেই সরকারের উদ্যোগের কথা বলেন। সেই জামায়াতকে পুলিশ বেশ সমাদর করে অন্যের সভা সরিয়ে নিতে বাধ্য করে, জামায়াতকে ১০ বছর পর প্রকাশ্য সভা করার অনুমতি দিয়েছে। এটা কীসের আলামত আমরা জানি না। তিনি বলেন, বলছি সাপের মুখে চুমু খেলে সাপ ছোবলই মারে। জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গে তোষামোদ-সমঝোতা সেই ফলই দেবে।’

১৪ দলীয় জোটের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, একাত্তরের গণহত্যার দায়ে উচ্চ আদালতের রায়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দলটি দেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করে না। এ দলকে সরকার কেন সমাবেশ করতে অনুমতি দিয়েছে, তা বোধগম্য নয়। আমরা ক্ষুব্ধ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক রায়েও জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় দলটির অবিলম্বে বিচার হওয়া উচিত। তারা বলছেন, ২০১৩ থেকে আগুনসন্ত্রাসের যে ঘটনাগুলো দেশে ঘটেছিল, সেগুলো বিএনপি একা করেনি, এর সঙ্গে জামায়াতও জড়িত ছিল। এসব ঘটনার জন্য জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসেও প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেই সন্ত্রাসী দলকে সরকার কোন বিবেচনায় রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে, তা কোনোভাবেই বোধগম্য হচ্ছে না। জামায়াতকে কোনোভাবেই রাজনীতি করতে দেওয়া যাবে না। প্রতিহত করতে হবে। দলটির রাজনীতি করার অর্থ হলো তাদের অপরাধকে বৈধতা দেওয়া। এটি হলে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা একটা অশুভ সিদ্ধান্ত। যেখানে আমরা জামায়াতের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছি, সেখানে জামায়াতকে প্রকাশ্যে সমাবেশ করার অনুমতি আমাদের মর্মাহত করে। এ ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়া উচিত।’

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ (মোজাফফর)-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা জামায়াতের ব্যাপারে আগের অবস্থানেই আছি। আমরা কখনোই চাই না স্বাধীনতাবিরোধী দল-জামায়াত রাজনীতি করুক, সভা-সমাবেশ করুক। সরকার কী কারণে সমাবেশের অনুমতি দিল, সেটা কি রাজনীতির কৌশল নাকি অন্যকিছু তা পরিষ্কার হওয়া দরকার।’ গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ সিকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাময়িক লাভের জন্য আদর্শহীন রাজনীতির সঙ্গে কোনো সমঝোতা করা কাম্য নয়। বিশ্ব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করার কোনো বিকল্প নেই। এখন আমাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির ঐক্য প্রয়োজন। এ শক্তি হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যে চেতনায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। কোনো সাময়িক সুবিধার জন্য অশুভ শক্তির সঙ্গে আঁতাত করলে লাভের চেয়ে উল্টোটা হতে পারে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here