১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের মাটিতে সংঘটিত বর্বরোচিত গণহত্যার ওপর প্রথমবারের মত নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ৩ দিনব্যাপি একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী ২৯ মার্চ বুধবার শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন। এতে স্থান পেয়েছে ২৭টি চিত্র।
এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ সময় জাতিসংঘের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি, জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নিউইয়র্কে বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, মিডিয়া কর্মী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ছিলেন।
এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেন, “আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং গণহত্যার ইতিহাস আন্তর্জাতিক সম্পদায়ের মাঝে গভীরভাবে ছড়িয়ে দিতে আমাদের আরও জোর প্রচেষ্টা চালানো দরকার”। আজকের এই প্রদর্শনী কেবল আমাদের ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করতে সহায়তা করবে না, আগামী দিনগুলোতে বিশ্বব্যাপী গণহত্যা এবং অন্যান্য নৃশংস অপরাধ রোধের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সকলের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
২৫ মার্চের জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের অভিপ্রায়ে নিউইয়র্কে এক দশক আগে গঠিত ‘জেনোসাইড’৭১ ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. প্রদীপ কর জাতিসংঘ সদর দফতরে বাংলাদেশে গণহত্যার ওপর ৩ দিনব্যাপি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী পর্বে এ সংবাদদাতাকে বলেন, আমি মনে করি এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। একাত্তরে বাংলাদেশে যে জেনোসাইড সংঘটিত হয়েছে তা বিশ্ব দরবারে পৌছে দিতে এ ধরনের প্রদর্শনীর গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্ব নাগরিকেরা সহজেই অনুধাবনে সক্ষম হবেন কী ঘটেছিল একাত্তরে তদানিন্তন পূর্ব বাংলায়।
ড. প্রদীপ কর উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অনেক আলোকচিত্রি শিল্পীর কাছে একাত্তরের জেনোসাইডের অনেক ভয়ংকর ছবি রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আরো বেশি প্রদর্শনী আন্তর্জাতিক অঙ্গনে করা দরকার। বিশেষ করে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার দৃষ্টিগোচরের পাশাপাশি সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে পাক হায়েনাদের জঘন্য বর্বরতার সাথে পরিচিত করতেই চিত্র এবং ডক্যুমেন্ট প্রদর্শনীর আয়োজনের বিকল্প নেই।
প্রদর্শনীর উদ্বোধনের পরই শতাধিক কূটনীতিক, পদস্থ কর্মকর্তা সেখানে এসে গভীর মনোযোগ দিয়ে পাকিদের বর্বরতার ছবি অবলোকন করেন।
একাত্তরের জেনোসাইডের প্রেক্ষাপট এবং একটি জাতি-গোষ্ঠিকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার ভয়ংকর মানসিকতা ইত্যাদি প্রসঙ্গ কৌতুহলী কূটনীতিকদের অবহিত করেন বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তারা। উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মনোয়ার হোসেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, বীর মুক্তিয্দ্ধোা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানও কূটনীতিকদের সবিস্তারে সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত করেন। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের মধ্যে আরো ছিলেন রেজাউল বারি, রাশেদ আহমেদ, গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ, শহীদ পরিবারের সন্তান মাসুদুল হাসান, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী মমতাজ শাহনাজ, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম বাদশা, শরাফ সরকার প্রমুখ। ৩১ মার্চ শুক্রবার পর্যন্ত এটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত।