ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে টিউবওয়েল চুরির অপবাদ দিয়ে দুই শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চাপলডাঙ্গা গ্রামে। এ ঘটনায় নির্যাতনের একটি ভিডিও বুধবার দুপুর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরলে ভিডিওটি ভাইরাল হয়। শিশু নির্যাতনের দায়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের ভাই নজরুল শেখ নামে একজনকে পুলিশ আটক করে বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুর আদালতে পাঠিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের চাপলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাজমুল শেখের বড় ভাই নজরুল শেখের একটি টিউবয়েল সম্প্রতি চুরি হয়। এ ঘটনার জের ধরে ইউপি সদস্য মো. নাজমুল শেখ (৩৯), তার ভাই নজরুল শেখ (৪৩) ও একই গ্রামের হাসান খন্দকার (৩৫) নামে তিন ব্যক্তি স্যালো মেশিনের টিউবওয়েল চুরির অপবাদে সুমন শেখ (৯) এবং সৌরভ আলী (১০) নামে দুইটি শিশুকে পায়ে শিকল বেঁধে মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় নাজমুল মেম্বরের উত্যপ্ত ধানের চাতালে কাঠের বাটাম ও বাঁশের লাঠি দিয়ে শুইয়ে বেধড়ক পেটায়। সুমন শেখ (৯) ওই ইউনিয়নের চাপলডাঙ্গা গ্রামের খাঁ পাড়া এলাকার দরিদ্র রিক্সা চালক মিন্টু শেখের ছেলে। সুমনের বাবা মিন্টু শেখ ঢাকায় রিক্সা চালায়। নির্যাতিত সুমন গ্রামের বাড়িতেই দাদা দাদির সাথে বসবাস করে। অপর শিশু সৌরভ আলী একই ইউনিয়নের মুক্তারপুর গ্রামের কৃষক আলীবর শেখের ছেলে। তবে নির্যাতনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না ভুক্তভোগী ওই পরিবার। এমনকি এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নিতে ভয় পাচ্ছে বলে জানা গেছে।
নির্যাতনের শিকার সুমন শেখ জানায়, প্রতিবেশী একজনের সাথে জাম বিক্রির জন্য বোয়ালমারী বাজারে যাচ্ছিলাম। এসময় নাজমুল মেম্বারের ভাই নজরুল ভ্যান থেকে আমাকে নামিয়ে তাদের বাড়ির ধানের চাতালে নিয়ে পায়ে শিকল বেঁধে শুইয়ে রাখে। এ সময় আমার পায়ে তলায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন চালায় তারা। এক পর্যায়ে আমাদের দুইজনের গলায় ফাড়া বাঁশ দিয়ে চেপে ধরে রাখে। ভয়ে আমরা দুইজনই চুরির কথা স্বীকার করতে বাধ্য হই।
নির্যাতনকারী ইউপি সদস্য মো. নাজমুল শেখের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও ফোনটি বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অপর নির্যাতনকারী চাপলডাঙ্গা গ্রামের আইয়ুব খন্দকারের ছেলে হাসান খন্দকারের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ফোনে যাগাযোগ করলে সাংবাদিকদের কথা শুনে ফোনের লাইন কেটে দেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ব্যাপারে গুনবহা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম জানান, কিছুদিন ধরেই ওই এলাকার কিছু বাড়ি ও মাঠ থেকে টিউবয়েল হারিয়ে যাচ্ছে। গত দুইদিন আগে নাজমুল মেম্বরের ভাইয়ের একটি টিউবয়েল চুরি হয়। শুনেছি ওই ছেলে দুটিই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের কাছ থেকে টিউবয়েলের হাতল উদ্ধার করা হয়। মেম্বরের ভাই শিশু দুটিকে ধরে এনেছিলো। পরবর্তীতে শিশুর অভিভাবকেরা শাসন করে নিয়ে তাদের নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছিলো। কিন্তু কারো কোন অভিযোগ না থাকায় মামলা হয়নি। শিশুদের অভিভাবকদের কোন অভিযোগ না থাকায় ধর্তব্য অপরাধ সংগঠনের দায়ে আটককৃত ব্যক্তিকে বৃহস্পতিবার ফরিদপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।