চীনে নিষেধাজ্ঞার ফাঁদে ইরানের আড়াই কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল

0

চীনের বিভিন্ন বন্দরে ছয় বছর ধরে আটকে থাকা আড়াই কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল নিয়ে নতুন সংকটে পড়েছে ইরান। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে আরোপিত কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে এই তেল আটকা পড়ে আছে। ইরানি এবং চীনা সূত্রের তথ্যানুসারে, ইরান এখন এই তেল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।  

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানি তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করবেন বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। তার লক্ষ্য হবে তেহরানের আয়ের পথ সীমিত করা, যা তিনি আগেও করেছিলেন।  

চীন বর্তমানে ইরানি তেলের প্রধান ক্রেতা এবং দেশটি ইরানের রপ্তানি করা ৯০ শতাংশ তেল কম দামে কিনে আসছে। এর ফলে চীনা তেল শোধনাগারগুলো বিপুল অর্থ সাশ্রয় করছে। তবে চীনের অবস্থান হলো, তারা একপক্ষীয় নিষেধাজ্ঞাকে স্বীকৃতি দেয় না।  

চীনের বন্দরে আটকে থাকা তেলের বর্তমান বাজারমূল্য ১৭৫ কোটি মার্কিন ডলার। তবে, এই তেল চীনের কাছে বিক্রি করাও এখন ইরানের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরানের তেল মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। অন্যদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইরানের সঙ্গে তাদের সহযোগিতা নিয়ম অনুযায়ীই চলছে।  

ইরান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও তেলের রপ্তানি চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজে তারা এমন ট্যাংকার ব্যবহার করে, যেগুলো তাদের গতিবিধি গোপন রাখতে পারে। তবে চীনে আটকে থাকা তেলের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। এই তেল কাগজপত্রে ইরানি তেল হিসেবেই চিহ্নিত ছিল এবং ২০১৮ সালে বিশেষ ছাড়ের আওতায় এটি চীনে সরবরাহ করা হয়েছিল।  

ইরানের জাতীয় তেল কোম্পানি (এনআইওসি) পূর্ব চীনের ডালিয়ান এবং ঝুশান বন্দরে এই তেল মজুত করেছিল। এনআইওসি ভাড়া করা তেলের ট্যাংক ব্যবহার করে এই তেল সংরক্ষণ করেছিল, যা ইচ্ছেমতো বিক্রি করা বা অন্যত্র সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল। তবে ২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রশাসন বিশেষ ছাড় প্রত্যাহার করলে ইরানের জন্য সংকট তৈরি হয়। চীনে মজুত করা এই তেলের কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি এবং চীনা কাস্টমস তা খালাসের অনুমতি দেয়নি।  

ডালিয়ানের তেল ট্যাংক পরিচালনা করে পিডিএ এনার্জি এবং ঝুশানের ট্যাংক পরিচালনা করে সিজিপিসি। তারা ইরানের কাছ থেকে ভাড়ার দাবি জানিয়ে আসছে। পিডিএ এনার্জি ৪৫ কোটি ডলার ভাড়া চেয়েছে।  

ইরানের তেল সংক্রান্ত কর্মকর্তারা এবং চীনা ট্যাংক পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাড়া সংক্রান্ত আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ডিসেম্বরে বেইজিং সফর করেন এবং এ বিষয়ে কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।  

ইরান যদি এই তেল বিক্রি করতে চায়, তাহলে তা প্রথমে ট্যাংক থেকে বের করে জাহাজে তুলে সাগরে নিয়ে যেতে হবে। এরপর নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করতে হবে। ইরানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই জটিল প্রক্রিয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।  

চীনের বন্দরে আটকে থাকা তেল ইরানের জন্য যেমন আর্থিক ক্ষতির কারণ, তেমনি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনায়ও এটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।  

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here