চার দিনের সফরে আগামী সপ্তাহে ভারত যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। সেখানে তার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। আলোচনার মূল বিষয় হবে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও ভূরাজনৈতিক সম্পর্ক।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ নির্ধারিত রয়েছে ২১ এপ্রিল।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই সফর উভয় পক্ষকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা করার সুযোগ দেবে।”
ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর ভ্যান্স যখন প্রথম ভারত সফর করছেন, তখন দেশ দুটি আগামী শরতের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে কাজ করছে। ভ্যান্সের সঙ্গে থাকছেন তার সন্তান ও স্ত্রী ঊষা ভ্যান্স, যার মা-বাবা ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে থিতু হয়েছেন।
বিবিসি লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে তীব্র বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে এই সফর হতে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন, কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে এই হার ২৪৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। তার পাল্টায় মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে চীন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শতাধিক দেশের ওপর যে শুল্ক আরোপ করার পর তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন, সেই তালিকা অনুযায়ী ভারতের ক্ষেত্রে ২৭ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপ হওয়ার কথা।
মার্কিন শুল্কনীতি ঘোষণার পরপরই দিল্লি ও ওয়াশিংটন বাণিজ্যিক সমঝোতায় দ্রুত পৌঁছাতে কাজ করে যাচ্ছে। ভারত ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পণ্যের উপর শুল্ক কমিয়েছে এবং ট্রাম্পের হুমকির মুখে আরও বিস্তৃত পরিসরে শুল্ক কাটছাঁটের কথা বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ছিল যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পৌঁছেছিল ১৯০ বিলিয়ন ডলারে।
ট্রাম্পের অভিষেকের পরপরই ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং দুই নেতা আলোচনায় বসেছিলেন।
সফরকালে মোদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘মেগা অংশীদারত্বের’ প্রশংসা করেছিলেন। তখন দুই নেতা একটি চুক্তি ঘোষণা করেছিলেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল, গ্যাসসহ বিভিন্ন পণ্য আরও আমদানি করার কথা ভারতের।
ট্রাম্প ও মোদি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দ্বিগুণ করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন। ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড একটি ভূ-রাজনৈতিক সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে আসার কয়েক সপ্তাহ পর ভ্যান্স এই সফরে আসছেন।
ভারত, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান নিয়ে চার জাতির যে জোট রয়েছে, সেই কোয়াডে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে চীনকে একটি স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফর শেষ করার সময় ভ্যান্সের সফর হতে যাচ্ছে।
ভ্যান্সের সফরসূচি অনুযায়ী, দিল্লি পৌঁছানোর আগে ১৮ এপ্রিল তিনি ইতালি সফরে যাবেন। সেখানে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে তার বৈঠক করার কথা রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শাসনামলে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভ্যান্স। জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ট্রাম্প এখনও বিদেশ সফর করেননি। সূত্র: বিবিসি