চীনের বিরুদ্ধে জাপানের বিমানে এফসি রাডার নিশানা করার অভিযোগ

0
চীনের বিরুদ্ধে জাপানের বিমানে এফসি রাডার নিশানা করার অভিযোগ

চীনের বিরুদ্ধে জাপানের বিমানে এফসি রাডার নিশানা করার অভিযোগ তুলেছে টোকিও।

জাপান অভিযোগ করে বলেছে, ওকিনাওয়া দ্বীপের কাছে আন্তর্জাতিক জলসীমায় দুটি পৃথক ঘটনার সময় চীনা যুদ্ধবিমানগুলো তাদের বিমানকে এফসি রাডারের (ফায়ার কন্ট্রোল রাডার) নিশানা বানিয়েছে।

‘এফসি রাডারের নিশানা’ বলতে, একটি রাডার সিস্টেম কোনও বিমানকে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে শনাক্ত ও অনুসরণ করছে এবং সেটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা সরবরাহ করছে।

রবিবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্টে জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি বলেন, “টোকিও দুটি ঘটনার ‘তীব্র প্রতিবাদ’ জানিয়েছে এবং ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোরভাবে সতর্ক করছে।” 

তিনি বলেন, “এফসি রাডারের নিশানা করা একটি বিপজ্জনক কাজ, যা নিরাপদ বিমান উড্ডয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সীমা অতিক্রম করেছে।”

তবে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ব্যাপারে চীনের পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

এফসি রাডারের নিশানা করার একটি সামরিক বিমানের সবচেয়ে হুমকিমূলক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি, কারণ এটি সম্ভাব্য হামলার ইঙ্গিত দেয়, লক্ষ্যবস্তু বিমানকে সরে যাওয়ার পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে।

জাপান এবং চীন উভয়ের দাবি করা বিতর্কিত ভূখণ্ডের কাছাকাছি অবস্থিত দ্বীপপুঞ্জে এই সংঘর্ষগুলো কয়েক বছরের মধ্যে দেশ দুটির বিমান বাহিনীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর সংঘর্ষ।

জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানা তাকাইচির একটি মন্তব্যকে ঘিরে গত মাসে চীন ও জাপানের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। নভেম্বরের শুরুতে পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “চীন যদি তাইওয়ানে আক্রমণ চালায়, তাহলে তা জাপানের নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি এবং জাপান সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।” 

বেইজিং তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে এবং দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনাও বাদ দেয়নি।

দ্বীপ রাষ্ট্রটি জাপানের পশ্চিমতম ইয়োনাগুনি দ্বীপ থেকে মাত্র ১১০ কিলোমিটার (৬৮.৪ মাইল) দূরে অবস্থিত।

যু্ক্তরাষ্ট্রের বাইরে মার্কিন বাহিনীর সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি রয়েছে জাপানে। ওকিনাওয়া দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের ৩২টি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।

চীনের রাডার তাক করা নিয়ে জাপানের দাবির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক্স-পোস্টে বলেন, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।”

সূত্র এবং গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চীন বৃহস্পতিবার পূর্ব এশিয়ার জলসীমায় বিপুল সংখ্যক নৌ ও উপকূলরক্ষী জাহাজ মোতায়েন করেছে। রয়টার্স জানিয়েছে যে, এক পর্যায়ে নৌকাগুলোর সংখ্যা ১০০টিরও বেশি ছিল।

তাইওয়ানের সরকার চীনের এই কর্মকাণ্ডকে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছে। জাপান বলেছে, তারা চীনা কার্যকলাপ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

রবিবার তাইওয়ানের কোস্টগার্ড জানায়, তারা তাইওয়ান প্রণালীর মধ্যরেখার পশ্চিম দিকে তিনটি চীনা সামুদ্রিক নিরাপত্তা জাহাজের মহড়া পর্যবেক্ষণ করছে, তবে তাইওয়ানের আশেপাশের জলসীমার পরিস্থিতি বর্তমানে ‘স্বাভাবিক’ বলে জানিয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, অনুসন্ধান ও উদ্ধার মহড়া তাইওয়ান প্রণালীর কেন্দ্রীয় জলসীমায় চলছে। দুর্ঘটনা ঘটে এমন এলাকাগুলোতে চীনা নৌবাহিনী টহল দিচ্ছে।

তাইওয়ানের কোস্টগার্ড বলছে,  চীন তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ‘বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা কথা’ বলছে, যার লক্ষ্য তাইওয়ানকে হয়রানি করা ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চালানো।

চীন তাইওয়ান প্রণালীর উপর নিজেদের সার্বভৌমত্ব দাবি করে এবং এটিকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ জলসীমা মনে করে, কিন্তু  যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান ও অন্যান্য দেশ এটিকে আন্তর্জাতিক জলপথ হিসেবে গণ্য করে। সূত্র: সিএনএন, আল-জাজিরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here