চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন না ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা

0

হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা আর সরাসরি দেখা করতে পারবে না। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো শুধু ডাক্তারদের ই-মেইল বা ডাকযোগে তাদের পণ্য সম্পর্কিত তথ্য পাঠাতে পারবে। কারণ এসব কর্মকাণ্ডে চিকিৎসকের মনোযোগ বিঘ্নিত হয় এবং রোগীরা সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন। 

সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন পেশ করেন স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন কমিশনের সদস্যরা।  প্রতিবেদনে নানা প্রস্তাব ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি ৩২টি মুখ্য সুপারিশ রয়েছে। সেখানে ২১ নম্বর সুপারিশে বিষয়টি উঠে আসে।

সুপারিশে বলা হয়েছে- ফুড, ড্রাগ, ও আইভিডি-মেডিকেল ডিভাইস প্রশাসন গঠন করতে হবে। একজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বে তিনটি শাখা থাকবে: ওষুধ-টিকা-প্রসাধনী, আইভিডি-মেডিকেল ডিভাইস ও নিরাপদ খাদ্য। ওষুধ-টিকা-প্রসাধনী খাতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রতি দুই বছর অন্তর অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা পর্যালোচনা, অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট এর মান নিয়ন্ত্রণ ও নিশ্চিতকরণ, স্থানীয় রোগীদের উপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও বায়োএভেইলিবিলিটি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিরীক্ষা কমিটি গঠন এবং বৈদেশিক যৌথ বিনিয়োগকে উৎসাহ প্রদান। 

এতে আরও বলা হয়েছে- আইভিডি-মেডিকেল ডিভাইস খাতে মধ্য-মেয়াদে টেলিমেডিসিন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি, নীতিমালা হালনাগাদ, স্থানীয় উদ্ভাবনকে উৎসাহ প্রদান, পুরোনো যন্ত্রপাতি পরিত্যাগ এবং বৈদেশিক যৌথ বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা খাতে সংক্ষিপ্ত-মেয়াদে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থানান্তর, ২০১৩ সালের খাদ্য আইন হালনাগাদ, খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনে ট্রেসেবিলিটি চালু, স্থানীয় পর্যায়ে অফিসার নিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতকরণ। 

চিকিৎসক-ফার্মাসিউটিক্যাল সম্পর্কিত নীতি সম্পর্কে সুপারিশে বলা হয়েছে- ওয়ার্ল্ড মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাবনার আলোকে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা দেয়া হচ্ছে, যাতে করে মধ্য- মেয়াদে একটি নৈতিক ও ভারসাম্যপূর্ণ চিকিৎসক-ফার্মাসিউটিক্যাল সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। ওষুধের নমুনা বা উপহার প্রদান করে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। মেডিকেল কনফারেন্স আয়োজনের পূর্বে অবশ্যই বাংলাদেশ মেডিকেল এডুকেশন অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল (বিএমইএসি) অনুমোদিত সিপিডি ক্রেডিট পয়েন্ট গ্রহণের জন্য আবেদন করতে হবে এবং মেডিকেল কনফারেন্সের সকল আয়-ব্যয়ের হিসাব ট্যাক্স অফিসে জমা দিতে হবে এবং এর একটি কপি বিএমইএসিতে জমা দিতে হবে। 

এতে আরও বলা হয়, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো অনুমোদিত কনফারেন্সে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে পারবে, তবে কেবল প্রদর্শনী এলাকায় পণ্যের উপস্থাপনার জন্য তাদের প্রতিনিধির শারীরিক উপস্থিতি অনুমোদিত থাকবে। কোনো ধরনের খাবার, উপহারের ব্যাগ বা অন্য কোনো উপহার সামগ্রী সরবরাহ ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, রাফেল ড্র ইত্যাদি করতে পারবে না। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো শুধু ডাক্তারদের ই-মেইল বা ডাকযোগের মাধ্যমে তাদের পণ্য সম্পর্কিত তথ্য পাঠাতে পারবে। প্রতিনিধিরা সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে দৈনন্দিন প্রোডাক্ট প্রমোশন করতে পারবে না। চিকিৎসকের চেম্বার বা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের ওষুধের/ পণ্য প্রচার কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে, কারণ এসব কর্মকাণ্ডে চিকিৎসকের মনোযোগ বিঘ্নিত হয় এবং রোগীরা সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন। চিকিৎসকদের যেকোনো পেশাগত সংগঠন, যেমন, চিকিৎসক সমিতি, পেশাগত সংস্থা বা বিশেষজ্ঞ সমাজে কোনো ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে থাকতে পারবে না। নতুন ওষুধ বা নতুন বৈজ্ঞানিক তথ্য থাকলে তা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক না করে কেন্দ্রীয়ভাবে নিরপেক্ষ বৈজ্ঞানিক সভার মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হবে। 

সরকার ২০২৪ সালের নভেম্বরে ১২ সদস্যের স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন গঠন করে। কমিশনের প্রধান হিসেবে রয়েছেন ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান।

কমিশনের সদস্য হিসেবে আরও আছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) জনস্বাস্থ্য ও হেলথ ইনফরমেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ জাকির হোসেন, পথিকৃৎ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার, শিশু নিউরো বিজ্ঞান বিভাগের নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নাইলা জামান খান, সাবেক সচিব এম এম রেজা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুজাহেরুল হক, আইসিডিডিআরবি’র ডা. আজহারুল ইসলাম, স্কয়ার হাসপাতালের স্কয়ার ক্যান্সার সেন্টারের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন, গ্রিন লাইফ সেন্টার ফর রিউম্যাটিক কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চের প্রধান পরামর্শক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, আইসিডিডিআরবি’র বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ আহসানুর রহমান এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ওমায়ের আফিফ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here