১২ দিন আগে কাতার থেকে দেশে আসে সুমন। গত সোমবার (৬ মার্চ) বিয়ের জন্য মেয়ে দেখে এসেছেন। গতকাল মঙ্গলবার মা তাজু বেগম শবে বরাতের রোজা রাখেন। মায়ের জন্য ইফতারি আনতে বাসার পাশের সিদ্দিক বাজারে যায় সে। আচমকা বিস্ফোরণে ছিটকে পড়ে সুমন। রক্তাক্ত সুমনকে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ফুলবাড়িয়ার সিদ্দিক বাজারের নর্থসাউথ রোডের সাত তলা পৌর ভবনে বিস্ফোরণে নিহতদের একজন সুমন।
সুমনের বাবা মমিন জানান, জন্মের পূর্বে আমাদের অবস্থা ছিল নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মত। একবেলা খেয়ে আরেক বেলা না খেয়ে কাটতো তাদের জীবন। ২৫ বছর আগে মেঘনা নদীর পাশের থাকার ঘরটি বিছানাসহ ভেঙে চলে যায় নদীতে। শূন্য হাতে পাড়ি দেন ঢাকায়। নানান জায়গায় ভবঘুরে হয়ে কাজ করার কয়েক বছর পর স্থায়ী হন ঢাকার সিদ্দিক বাজারের সুরিটোলা এলাকায়। পরে সুমনের জন্ম হয়। পেট চালাতে গিয়ে ছেলেকে আর পড়াশোনা করাতে পারেননি তিনি। শিশু বয়সেই সুমন যুক্ত হন বাবার সঙ্গে। পরে ৩ বছর আগে ভাগ্য বদলাতে সুমন পাড়ি দেন কাতারে। এক ভাই ও দুই বোন আর বাবা মায়ের সংসারের দায়িত্ব উঠে যায় সুমনের কাঁধে। এর মাঝে এক বোনকে বিয়ে দেন।
সুমনের বাবা আরও জানান, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি (১১ দিন) আগে প্রবাস থেকে দেশে এসেছে সুমন। বিয়ে করবে তাই গত ৬ মার্চ গেন্ডারিয়া এলাকায় মেয়েও দেখতে যায়। পছন্দও হয়। বুধবার পাকা কথা বলার তারিখ ছিল।
সুমনের বাবা আরও বলেন, দুপুরে আমার সঙ্গে খাবার খেয়েছে সুমন। খাবার খেয়ে বলে, “আব্বা তুমি মার কাছ থেকে খরচ নিয়া দোকানে যাও। আমি মার ইফতারি আনতে যাই।”
একসঙ্গে বাবা ছেলে বের হলাম। সে গেল সিদ্দিক বাজার। আমি দোকানে। একটু পরেই খবর পাই বিস্ফোরণ হয়েছে। আর একসাথে ঘর থেকে বের হওয়া ছেলেটাকে দেখি ঢাকা মেডিকেলের ফ্লোরে পড়ে আছে। ডাক্তার বলে আমার ছেলে নাকি মারা গেছে।
সুমনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার চালিয়াভাংগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, ঘটনার ২০ মিনিট পরই আমার কয়েকজন বন্ধু সুমনের মৃত্যুর বিষয়ে জানিয়েছে। তখন থেকে অস্থিরতায় আছি। তাদের সারাজীবনই গেল কষ্টে।
তিনি বলেন, সুমন সম্পর্কে আমার ভাতিজা ঘরের নাতি। তার জন্মের আগেই বাবা-মা পুরো পরিবারসহ ঘর বাড়ি হারিয়ে ঢাকায় চলে গেছে। তবে সুমনের বাবা মমিন পাশের টিডিরচর এলাকায় বিয়ে করেছেন। তাই বছরে কয়েকবার তারা গ্রামে আসতো। ঢাকার ফুটপাতে জুতা বিক্রি করতো সুমনের বাবা।