গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র, কংগ্রেস বলল ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’

0

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতির’ অভিযোগ তুলেছে। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) দিল্লির একটি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করার পর বুধবার এমন অভিযোগ তোলে দলটি।

কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে ইডি এই অভিযোগপত্র দাখিল করেছিল ৯ এপ্রিল। বেআইনি আর্থিক লেনদেন প্রতিরোধ আইনে (পিএমএলএ) আনা এই মামলায় এই প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। বিশেষ বিচারক পর্যালোচনার পর মঙ্গলবার তা গ্রহণ করেন।

ইডির অভিযোগপত্রে বলা হয়, গান্ধীরা একটি শেল কোম্পানি গড়ে ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ পত্রিকার ২ হাজার কোটি রূপি মূল্যের সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল নিয়েছেন।

তবে সোনিয়া গান্ধী ও রাজীব গান্ধী আগেই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বিজেপির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে প্রতিদ্বন্দ্বীদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ তুলেছেন।

কংগ্রেস আইনপ্রণেতা অভিষেক সিংভি বলেন, মামলাটি আইনি ছদ্মবেশে প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছুই না।

এটিকে ‘রাজনৈতিক গুন্ডামি’ বলেও তিনি অভিহিত করেছেন।

কংগ্রেস দলের একজন প্রবীন আইনপ্রণেতা জয়রাম রমেশ এই মামলাটিকে ‘প্রতিদ্বন্দ্বীদের হয়রানি এবং লক্ষ্যবস্তু’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এই অভিযোগকে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকার ভয় দেখিয়ে বিরোধীদের কণ্ঠ রোধ করতে চাইছে।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমালোচকরা বিজেপির বিরুদ্ধে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ তুলেছেন। বেশ কয়েকজন বিরোধী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত চলছে।

তবে বিজেপির আইনপ্রণেতা রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, ভারতের বিচারবিভাগ স্বাধীন এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলোও প্রধানমন্ত্রী মোদি সরকারের অধীনে কাজ করার জন্য স্বাধীন।

তাদের প্রতিবাদ (অভিযুক্ত ব্যক্তিরা) করার অধিকার আছে। তবে এই দেশ লুটপাট করার কোনো লাইসেন্স তাদের নেই বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।

বিজেপি নেতা সুব্রামানিয়াম স্বামীর করা ব্যক্তিগত অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২১ সালে তদন্ত শুরু করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সুব্রামানিয়াম অভিযোগ করেন, কংগ্রেসের দলীয় তহবিল ব্যবহার করে গান্ধীরা ‘অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড’ (এজেএল) নামের সংস্থার নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং এর মাধ্যমেই কোটি কোটি রূপির সম্পত্তি দখলে নেয়।

এজেএল সংস্থা ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকা প্রকাশ করে। ২০০৮ সালে পত্রিকাটি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে পত্রিকাটি ডিজিটাল প্রকাশনায় আবার কাজ শুরু করে। কংগ্রেসে বলছে, ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’-এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকায় তারা এজেএল-কে ঋণ দিয়ে সহায়তা করেছে বছরের পর বছর ধরে।

২০১০ সালে নবগঠিত ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থার কাছে এজেএল তাদের শেয়ার স্থানান্তর করে ঋণমুক্ত হয়েছিল। সেই ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান’ ছিল সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস নেতাদের কোম্পানি। ইয়ং ইন্ডিয়ান মাত্র ৫০ লাখ রূপির বিনিময়ে এজেএলের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল, যার সম্পত্তির মোট মূল্য ২,০০০ কোটিরও বেশি।

মামলায় অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ)-এর ৩, ৪৪, ৪৫ ও ৭০ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। ইডি সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড চেয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এ মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ এপ্রিল।

কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের টার্গেট করতে ইডি-কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here