গাজার একটি শরণার্থী শিবিরে ঠান্ডায় সাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এসব শিশুদের মধ্যে জুমা আল-বাত্রান নামের এক নবজাতক শিশুও ছিল, যাকে ঠান্ডার কারণে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
জুমার বাবা ইয়াহিয়া আল-বাত্রান তার নবজাতক সন্তানের ছোট ছোট পোশাক জড়িয়ে ধরে বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের চোখের সামনে মরতে দেখছি।
গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় একটি অস্থায়ী তাঁবুতে বাস করছেন আল-বাত্রান পরিবার। বোমা হামলা থেকে বাঁচতে তারা উত্তর গাজার বাইত লাহিয়া থেকে পালিয়ে এখানে আশ্রয় নিলেও ঠান্ডা তাদের সন্তানদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। পরিবারের মা নোরা আল-বাত্রান বলেন, বোমার হাত থেকে বাঁচতে পালালাম, আর এখানে এসে তাদের ঠান্ডায় মরতে হলো!
জুমার যমজ ভাই আলি বর্তমানে দক্ষিণ গাজার একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছে। শরণার্থী শিবিরে ঠান্ডার তীব্রতা এবং পর্যাপ্ত গরম কাপড় বা কম্বলের অভাবে আলি-সহ অন্যান্য শিশুদের জীবন ঝুঁকির মুখে।
শরণার্থী পরিবারগুলোকে প্রতিদিন তীব্র ঠান্ডা, বৃষ্টি এবং খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে মাহমুদ আল-ফাসিহ জানান, তার শিশু কন্যা সিলাকে ‘ঠান্ডায় জমে থাকা অবস্থায়’ পাওয়া যায়। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।
ডা. আহমদ আল-ফাররা জানান, শিশু সিলা ‘তীব্র হাইপোথার্মিয়া ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে’ মারা গেছে। একইভাবে আরেক নবজাতক, আয়েশা আল-কাসাস, ঠান্ডার কারণে প্রাণ হারিয়েছে।
নবজাতক আয়েশার চাচা মোহাম্মদ আল-কাসাস বলেন, যারা বোমার আঘাতে মারা যায় না, তারা ক্ষুধা বা ঠান্ডায় মারা যাচ্ছে। গাজায় বেঁচে থাকা যেন মৃত্যুর আরেক রূপ।
হামাস সরকার সতর্ক করেছে, আসন্ন আরও কঠিন আবহাওয়া দুই মিলিয়ন বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে শিশু, নবজাতক এবং প্রবীণদের মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ডা. ফাররা বলেন, তাঁবুতে জীবনযাপন অত্যন্ত বিপজ্জনক। শীত এবং জ্বালানির অভাব শিশুদের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
গাজার শরণার্থীদের এই কঠিন বাস্তবতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা যে, মানবিক সহায়তা ছাড়া তাদের জীবন-মৃত্যুর দোলাচল থেকে মুক্তি অসম্ভব।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল