যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজার সীমান্তে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করার পরিকল্পনা করছে। সেই সাথে গাজায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা বিবেচনা করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ইসরায়েলি অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম শমরিম মঙ্গলবার জানিয়েছে, এই ঘাঁটির জন্য ব্যয় হবে আনুমানিক ৫০০ মিলিয়ন ডলার। এই সামরিক ঘাঁটিটি ওয়াশিংটনকে ইসরায়েলি সমন্বয় ছাড়াই স্বাধীনভাবে মাঠে কাজ করার সুযোগ দেবে। তারা চাইলে সরাসরি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা শুরু করে। দুই বছর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবের আওতায় আপাতত গাজায় যুদ্ধবিরতি চলছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এই পথে হাঁটতে বাধ্য হয় ইসরায়েল।
তবে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়েছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ (মার্কিন ঘাঁটি নির্মাণ) কেবল একটি দখলদারিত্বকে অন্য দখলদারিত্ব দিয়ে প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। যেখানে কেবল ইসরায়েলি সেনাদের জায়গায় বিদেশি সেনা আসবে।
এর আগে নভেম্বরের প্রথম দিকে, গাজার হামাস প্রতিরোধ আন্দোলনের সিনিয়র নেতা মুসা আবু মারজুক স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে তাদের গোষ্ঠী এমন কোনো ব্যবস্থা কখনোই মেনে নেবে না। তিনি আল জাজিরাকে বলেছিলেন, আমরা গাজায় দখলদার সেনাবাহিনীর বিকল্প হিসেবে সামরিক শক্তিকে মেনে নিতে পারি না।
এর আগে, ওয়াশিংটন একটি খসড়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব প্রচার করেছিল। যেখানে কমপক্ষে দুই বছরের জন্য গাজায় তথাকথিত আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠনের প্রস্তাব ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, কাতার এবং মিশর কর্তৃক গঠিত এই বাহিনী পুনর্গঠন ও নিরাপত্তার অজুহাতে কাজ করবে, তবে কার্যকরভাবে গাজার নিরস্ত্রীকরণ এবং প্রতিরোধ অবকাঠামো ভেঙে ফেলা নিশ্চিত করবে।
আমেরিকান সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস অনুসারে, আইএসএফ পরিকল্পনাটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ২০ দফা প্রস্তাবের প্রথম ধাপের অংশ, যিনি দাবি করেন এটি গাজার যুদ্ধের অবসান ঘটাবে। তবে সমালোচকরা যুক্তি দিয়েছেন, এই প্রস্তাবটি ইসরায়েলি দখলদারিত্ব, যুদ্ধাপরাধের জবাবদিহিতা এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ক্ষতিপূরণের অধিকারের মতো মূল সমস্যাগুলোকে উপেক্ষা করে। আবু মারজুক আরও বলেন, ওয়াশিংটন এবং তেল আবিব উভয়ই নিরাপত্তা পরিষদকে আনুষ্ঠানিকভাবে এমন একটি মিশনের অনুমোদন দিতে আপত্তি জানিয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই গাজার উত্তরে কিরাত গাত শহরে একটি অপেক্ষাকৃত ছোট সিভিল-মিলিটারি কোঅর্ডিনেশন সেন্টার খুলেছে, যাকে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড কর্মকর্তারা মানবিক ও সামরিক সমন্বয়ের কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেখানে সফরের সময় অঙ্গীকার করেছিলেন হামাসকে নিরস্ত্র করা এবং গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ করা হবে। তবে হামাস বলেছে, তাদের অস্ত্রশস্ত্র দখলদারিত্বের অস্তিত্বের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত, যার জন্য প্রতিরোধ যোদ্ধাদের গাজার বিরুদ্ধে যেকোনো বড় আকারের আগ্রাসনের জন্য সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।
সূত্র: প্রেস টিভি

