গাজায় স্থায়ী যুদ্ধ বিরতির দাবিতে হোয়াইট হাউজের সামনে সোমবার অনশন শুরু করেছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং খ্যাতনামা চিত্র-তারকারা। ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিপ্রায়ে ৫ দিনের এই অনশন কর্মসূচির সংবাদ শীর্ষস্থানীয় সকল গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ ও প্রচার পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, অনশনে অংশগ্রহণকারী কংগ্রেসম্যান এবং স্টেট সিনেটর-অ্যাসেম্বলিম্যানদের প্রায় সকলেই বামপন্থি হিসেবে পরিচিত।
জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং সোস্যালিস্ট ডেমক্র্যাট হিসেবে পরিচিত সিনথিয়া নিক্সন এ সময় বলেন, ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধাদের অতর্কিত হামলায় ১২ শতাধিক ইসরায়েলি নিহত এবং দুই শতাধিক অপহৃত হবার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলিরা যে বর্বরতা চালাচ্ছে তা হামাসের চেয়েও ভয়ংকর সন্ত্রাসে পরিণত করেছে। এমন আচরণকে যুদ্ধাপরাধের সামিল বলে গণ্য করা উচিত। জুইশ সন্তানের মা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে সিনথিয়া আরও বলেন, গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে যুদ্ধের নামে মার্কিন বাহিনী যত মানুষ হত্যা করেছে, ৭ সপ্তাহে ইসরায়েলিরা তার চেয়ে বেশী ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলো গাজা উপত্যকায়। এহেন অবস্থায় আমি বিচলিতবোধ করছি। খুবই কষ্ট পাচ্ছি। বেসামরিক নাগরিকদের এভাবে হত্যা অব্যাহত রাখতে দেয়া সমীচিন নয়।
সিনথিয়া উল্লেখ করেন, গত বছর বিশ্বের দুই ডজনের মত রণক্ষেত্রেও ৬১৫০ শিশু নিহত হবার ঘটনা ঘটেনি-যা ৭ সপ্তাহে গাজায় ইসরায়েলিরা ঘটিয়েছে। গাজায় এখন বসবাসের উপযোগী একটি বাড়িও নেই। সব ধ্বংস হয়েছে ইসরায়েলের বোমা বর্ষণে। এমন অবস্থাকে কোনভাবেই স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য করার সুযোগ নেই। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উদ্দেশ্যে অভিনেত্রী সিনথিয়া আরও বলেন, গাজায় নিহত শিশুরা যদি আপনার সন্তান হতো, তাহলে কেমন বোধ করতেন। তাই বিনয়ের সাথে আবেদন জানাচ্ছি চলমান যুদ্ধ বিরতি দীর্ঘতর করুন।
নিউইয়র্কের অ্যাসেম্বলিম্যান মামদানি বলেছেন, ইসরায়েলে সামরিক সহযোগিতার জন্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন আরো ১৪ বিলিয়ন ডলারের অনুমোদন চেয়েছেন কংগ্রেসের কাছে। অথচ এই অর্থ ব্যয় করা হবে গাজায় গণহত্যায়। জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সংস্থার পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও সামরিক সহায়তার পুরোটাই ব্যয় করা হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের নির্মূলের অভিযানে। হামাস নির্মূলের নামে একটি জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা থাকা উচিত নয়।
আমেরিকার সর্বত্র প্রতিবাদ-সমাবেশের মধ্যেই শুরু এই অনশনে জুইশ সংগঠনের নেতারাও অংশ নিয়েছেন। জুইশরাও গাজায় ইসরায়েলিদের বর্বরতার নিন্দা জানাচ্ছেন। এই অনশন কর্মসূচির আয়োজক সংস্থার মধ্যে রয়েছে ক্যাম্পেইন ফর প্যালেস্টিয়ান রাইটস, দ্য আডাল্লাহ জুইশ প্রজেক্ট, জুইশ ভয়েস ফর পীচ, ইফ নট নাও, ড্রিম ডিফেন্ডারস, ডেমক্র্যাটিক সোস্যালিস্টস অব আমেরিকা, ইন্সটিটিউট ফর মিডল ইস্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিং এবং আমেরিকান আরব এন্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটি।
এদিকে, নির্বাচনী এলাকার মানুষের সাথে সোমবার এক টাউন হল মিটিংয়ে কংগ্রেসওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো করটেজ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেয়া অর্থ ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লংঘনের কাজে ব্যবহার করছে ইসরায়েলিরা-এটা মেনে নেয়া যায় না। হামাসের জঙ্গি তৎপরতা ঠেকানোর নামে ফিলিস্তিনের নিরস্ত্র শিশু-নারীসহ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যাযজ্ঞকে প্রশ্রয় দেয়া কখনোই সমীচিন হতে পারে না। গাজায় ইসরায়েলিরা যা করছে তা স্পষ্টতই যুদ্ধাপরাধের সামিল বলেও মন্তব্য করেছেন নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস এলাকা থেকে নির্বাচিত ডেমক্র্যাটিক পার্টির এই কংগ্রেসওম্যান।