শীতকালীন ঝড় ও টানা বৃষ্টিতে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বাস্তুচ্যুত লাখো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুত থাকলেও ইসরায়েলের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা ও কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে জীবনরক্ষাকারী সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না।
জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী, তাবু, কম্বলসহ জরুরি আশ্রয় ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী সীমান্তে প্রস্তুত রয়েছে। তবে সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে এসব সহায়তা ঢুকতে ইসরায়েল এখনও বাধা দিচ্ছে। এর মধ্যেই বুধবার গাজা সিটির শাতি শরণার্থী শিবিরে ঝড়ের সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি ভবনের ছাদ ধসে পড়ে। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ছয়জন ফিলিস্তিনিকে জীবিত উদ্ধার করেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে।
এর আগে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, তীব্র শীতের কারণে দুই সপ্তাহ বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এতে অপ্রতুল আশ্রয়ে বসবাসরত শিশু ও বৃদ্ধদের ঝুঁকির বিষয়টি আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র বলেন, ঝড়ের কারণে গাজাজুড়ে বহু আশ্রয়কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে এবং মানুষের ব্যক্তিগত মালামাল নষ্ট হয়েছে। তিনি জানান, ‘এই পরিস্থিতিতে গাজাজুড়ে প্রায় ৩০ হাজার শিশু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত সংস্কারকাজ না হলে মানবিক কার্যক্রম চালু রাখা কঠিন হবে।’
গাজার ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স এক বিবৃতিতে চলমান পরিস্থিতিকে ‘চরম মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এমন অবস্থার মধ্যেই কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানী ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনায় গাজায় যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীল রাখা, মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করা এবং যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
ওয়াশিংটন থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক অ্যালান ফিশার জানান, কাতারের প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা অবশ্যই ‘নিঃশর্তভাবে’ প্রবেশ করতে দিতে হবে। তার ভাষায়, ইসরায়েল লাখো মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ আটকে দিচ্ছে।
বৈঠকে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনাও আলোচনায় আসে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন বাহিনী হলে তা অবশ্যই নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে এবং যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত অগ্রসর হওয়া জরুরি।
এদিকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও গাজায় সহিংসতা পুরোপুরি থামেনি। চিকিৎসা সূত্র জানায়, গাজা সিটির কেন্দ্রীয় এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১১ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ‘ইয়েলো লাইন’-এর কাছে একটি মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় তদন্ত চলছে।
আল জাজিরার সাংবাদিকদের মতে, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি কামান থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। গাজা সিটির তুফফাহ এলাকাতেও গুলিতে দুজন আহত হন।
অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলাও বেড়েছে। ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থা ওয়াফা জানায়, কালকিলিয়ায় ইসরায়েলি সেনারা এক যুবকের পায়ে গুলি চালিয়েছে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৭০ হাজার ৬৬৮ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭১ হাজার ১৫২ জন আহত হয়েছেন।

