গঙ্গাচড়ার মিষ্টি কুমড়া যাচ্ছে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে

0

রংপুরের তিস্তা নদী বেষ্টিত গঙ্গাচড়ার চরে উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া যাচ্ছে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে। চরের উৎপাদিত কুমড়া পাল্টে দিয়েছে ওই এলাকার অর্থিনীতির চিত্র। তিস্তার নদীর চিক চিক করে জেগে উঠা চরে এখন শুধু ফসলের সমারোহ। যেদিকে চোখ যাবে দেখা যাবে মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, তামাক, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের সমারোহ। 

সরেজমিনে গঙ্গাচড়া উপজেলায় গজঘন্টা ইউনিয়নের ছালাপাক চরসহ বিভিন্ন চরে গিয়ে দেখা গেছে, বালু চরে মিষ্টি কুমড়া চাষ হচ্ছে। কুমড়া চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। আর এ কারণেই মিষ্টি কুমড়া চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। এই উপজেলারর ১০ ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নই তিস্তা নদী বেষ্টিত। শুকনো মৌসুমে চকচকে বালু থাকায় স্থানীয়রা এসব চরকে সাদা সোনার দেশ বলে থাকেন। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, তিস্তার বালু চরে একরের পরে একর জমিতে আবাদ হয়েছে কুমড়া। সোলার প্যানেল লাগিয়ে সেচ দেয়া হচ্ছে বালু চরে। অক্টোবরের প্রথম দিকে লাগানো এই কুমড়া মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত পাওয়া যাবে। তবে উল্লেখযোগ্য হল এই চরের আবাদ করা কুমড়া এখন মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে। চর ছালাপাক ছাড়াও, রাজবল্বভ, ধামুর, মহিপুর, শংকরদহ, কোলকোন্দ চরসহ বিভিন্ন চরে কুমড়ার আবাদ হচ্ছে। তিন থেকে চার ফুট গভীরে গর্ত করে কুমড়ার গাছ লাগানো যায়। সাদা চরে সবুজের সমারোহে প্রকৃতিতে এনে দিচ্ছে ভিন্ন এক দৃশ্য। 

ছালাপাক চরে বাসিন্দা মজিবর রহমান ৮০ শতক জমিতে কুমড়ার আবাদ করেছেন। এ পর্যন্ত ২০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছেন। তিনি আশা করছেন আরও ৬০ হাজার টাকা কুমড়া বিক্রি করতে পারবেন। 

মকদুম মিয়া নামে এক ব্যক্তি ৬ মাসের জন্য ৪৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে কুমড়ার আবাদ করেছেন।  তিনি বললেন, এবার কুমড়ার ফলন ভাল হয়েছে। আয়ও ভাল হবে। 

রোকসানা বেগম বিলকিস বললেন, তিনি এমফোসি নামে একটি সংস্থার সাথে জড়িত হয়ে ১০০ একর জমিতে কুমড়ার আবাদ করেছেন। ৭ লাখ টাকার মূল্যের সোলার প্যানেলও লাগিয়েছেন সেচ কাজের জন্য। প্রতিকেজি কুমড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা বিক্রি করছেন।

এখানকার উৎপাদিত কুমড়া বাজারজাত করার জন্য স্থানীয় বাজার গড়ে উঠেছে রাজবল্বভ মতলেবের বাজারে। বাজারের এক পাশে কুমড়ার বিশাল স্তুপ করে রাখা হয়েছে। এখানে দেখা গেছে নারী-পুরুষ মিলে ৩০-৩৫ জন শ্রমিক কুমড়া প্যাকেটজাত করতে ব্যস্ত সময় পার কছেন। কুমড়া প্যাকেট করা শ্রমিক মঞ্জুরা বেগম, সামছুন্নাহারসহ কয়েকজন জানালেন, কুমড়া প্যাকেট করা বাবদ তাদের প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে দেয়া হয়। এই টাকা তাদের সংসারের বাড়তি খরচের কাজে লাগে। 

স্থানীয় ক্রেতা হাবিবুর রহমান জানালেন, তিনি স্থানীয় ভাবে কুমড়া সংগ্রহ করে এই বাজারে নিয়ে আসেন। এখন থেকেই প্যাকেট হয়ে সরাসরি মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে। 

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ওই এলাকার ইনচার্জ আতোয়ার রহমান বললেন, এ পর্যন্ত ২০০ মেট্রিক টনের বেশি কুমড়া মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। তার প্রতিকেজি কুমড়ার দাম পড়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকা। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান বলেন, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ৭৫০ হেক্টর চরে কুমড়ার আবাদ হয়েছে। এসব জমি থেকে ২৮ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন কুমড়ার উৎপাদন হবে বলে তিনি আশা করছেন।

তিনি বলেন, রংপুরের উৎপাদিত কুমড়া স্থানীয় পর্যায়ে চাহিদা মিটিয়েও সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ায় পাঠানো হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here