ভারতের জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার এবং কোচ সঞ্জয় বঙ্গারের কন্যা অনন্যা বঙ্গার সম্প্রতি ক্রিকেটারদের আচরণ নিয়ে এক বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন। এক সময়ের ক্রিকেটার অনন্যা এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার তাঁকে মোবাইল ফোনে নগ্ন ছবি পাঠাতেন।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি ও লিঙ্গ নিশ্চিতকরণে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন অনন্যা। রূপান্তরের এই দীর্ঘ যাত্রার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সম্প্রতি তিনি সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন।
আগে আরিয়ান নামে পরিচিত অনন্যা বাবার দেখানো পথে হেঁটে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, লিঙ্গ নিশ্চিতকরণের অস্ত্রোপচারের পর ক্রিকেট ক্যারিয়ার ধরে রাখতে গিয়ে তাঁকে একাধিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বর্তমানে অনন্যা যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।
শুরু থেকেই অনন্যার এই পথ মসৃণ ছিল না। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি ক্রিকেট বিশ্বের ‘টক্সিক ম্যাসকুলিনিটি’ অর্থাৎ পুরুষালি বিষাক্ততা নিয়ে মুখ খুলেছেন।
লল্লানটপ পডকাস্টে অনন্যাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কখন তিনি প্রথম বুঝতে পারেন যে তিনি ভুল লিঙ্গ নির্বাচন করেছেন? জবাবে অনন্যা বলেন, “আমার যখন আট বা নয় বছর বয়স, তখন আমি মায়ের আলমারি থেকে পোশাক বের করে পরতাম। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বলতাম, আমি একটি মেয়ে। আমি মেয়ে হতে চাই।”
অনন্যা আরও বলেন, “মুশির খান, সরফরাজ খান, যশস্বী জয়সওয়ালের মতো এখনকার বেশ কিছু পরিচিত ক্রিকেটারের সঙ্গে আমি খেলেছি। বাবার পরিচিতির কারণে আমাকে নিজের আসল পরিচয় গোপন রাখতে হয়েছিল। ক্রিকেট বিশ্ব নিরাপত্তাহীনতা ও পুরুষালি বিষাক্ততায় পরিপূর্ণ!”
এরপর অনন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, লিঙ্গ নিশ্চিতকরণ অস্ত্রোপচারের পর তাঁর সতীর্থ ক্রিকেটারদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল। উত্তরে অনন্যা জানান, “কিছু সমর্থন ছিল, তবে কিছু হয়রানিও সহ্য করতে হয়েছে।”
অ্যাংকরের প্রশ্ন ছিল, “কী ধরনের হয়রানি?” জবাবে অনন্যা বলেন, “কিছু ক্রিকেটার আমাকে যখন-তখন তাদের নগ্ন ছবি পাঠাত।”
অনন্যা এমন একজনের কথাও উল্লেখ করেন, যিনি তাঁকে মৌখিকভাবেও হেনস্তা করেছিলেন। তিনি বলেন, “সেই ব্যক্তি জনসমক্ষে খারাপ ভাষা ব্যবহার করত। এরপর সেই একই ব্যক্তি আমার পাশে এসে বসত এবং আমার ছবি চাইত। আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল যখন আমি ভারতে ছিলাম, তখন একজন প্রবীণ ক্রিকেটারকে আমার পরিস্থিতির কথা জানাই। তিনি আমাকে বলেন, চল গাড়িতে যাই, আমি তোমার সঙ্গে ঘুমোতে চাই।”
সঞ্জয় বঙ্গারের মতোই অনন্যাও একজন ক্রিকেটার। তিনি স্থানীয় ক্লাব ক্রিকেটে ইসলাম জিমখানার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বাঁহাতি এই ব্যাটার যুক্তরাষ্ট্রের লিস্টারশায়ারের হিংকলি ক্রিকেট ক্লাবের হয়েও খেলেছেন।
তবে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) জানায়, ট্রান্সজেন্ডার ক্রীড়াবিদদের নারী ক্রিকেটে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে না।
তৎকালীন আইসিসির প্রধান নির্বাহী জিওফ অ্যালারডাইস বলেছিলেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া আমাদের কাছে খেলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদের অগ্রাধিকার হলো, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নারীদের খেলায় একটি সংহতি রাখা এবং খেলোয়াড়দের সুরক্ষা দেওয়া।”
ইনস্টাগ্রামে একটি দীর্ঘ পোস্টের মাধ্যমে অনন্যা আইসিসির নতুন নিয়মের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে ম্যানচেস্টারে বসবাসকারী অনন্যা ইনস্টাগ্রামে বেশ সক্রিয়।