কোষ্ঠকাঠিন্যে প্রাকৃতিক চিকিৎসা

0

আমরা যেসব বস্তুকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি তার একটা অংশ হজমের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে আর বাদবাকি অংশ মলে পরিণত হয়। খাদ্যতন্তু বা ফাইবার পেটে হজম হয় না এবং মল তৈরির প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচ্য। সুস্থ মানুষের প্রতিদিন এমন পরিমাণ মল তৈরি হওয়া উচিত যাতে (মলাধার) মলের থলে অন্তত একবার ভর্তি হয় তাতে দিনে একবার মলত্যাগ করার প্রয়োজন হবে। নিয়মিত মল ত্যাগের অভ্যাস থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। 

মল অধিক সময় ধরে মলাধারে জমা থাকলে অর্থাৎ নিয়মিত মলত্যাগ না করতে পারলে, মল থেকে পানি শোষিত হওয়ার ফলে মল থেকে পানি বের হয়ে যাওয়ায় মল দিনে দিনে শক্ত আকার ধারণ করে, ফলে ব্যক্তি কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। এর সবকিছুর একমাত্র প্রাকৃতিক সমাধান অধিক মলবর্ধক খাদ্য মূলত শাকসবজি, ফলমূল, দুধ-দধি ও আস্ত শস্যদানা, এ ধরনের খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা। এ খাদ্যবস্তুগুলো কিন্তু স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের প্রধান উপাদানও বটে।

ফলমূল : বেশ কিছু ফলে অধিক পরিমাণে ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহূত হয়ে আসছে। Appricot-কাঠ বাদাম, Figs-আনজির, পোঁপ, আনারস, পেয়ারা, Peaches, Prunes ইত্যাদি।

শাকসবজি : শাকসবজি ফাইবার বা খাদ্যতন্ত্রর প্রাকৃতিক উৎস। শস্যদানা (সবশুদ্ধ) যেমন-লালচাল, লালআটা ও আস্ত ডাল খেলে প্রচুর খাদ্যতন্ত্র/ডায়েটারি ফাইবার পাওয়া যেতে পারে।

দেশীয় ঔষধি : ইসবগুলের ভুসি, তোকমা, তিসির খৈল, তিসি বাটা, শর্ষে বাটা, তিল ভাজা (ছালসহ) কাসুন্দি।

ফাইবার সমৃদ্ধ এসব খাবার প্রথমে শুরু করার সময় অল্প অল্প করে শুরু করতে হবে। বিশেষ করে যারা আগে ফাইবার জাতীয় খাদ্য খুব বেশি গ্রহণ করে অভ্যস্ত নন। তা না হলে পেটে গ্যাস উৎপন্ন হয়ে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে ১-২ সপ্তাহ সময়ের মধ্যে পেটে গ্যাস উৎপন্ন হওয়া কমে যায়।

কায়িক শ্রম : নিয়মিতভাবে প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট স্বাভাবিক গতিতে হাঁটা, সাঁতরানো, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, বাগানে কাজ করা, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। দুধ এবং দই মলবর্ধক হওয়ায় অবশ্যই খেতে হবে। মিষ্টি আলু একটু বেশি পরিমাণে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। কচু, কচুর মুথি, লতা, ডাটা ও পাতা পর্যাপ্ত পরিমাণ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

প্রতিদিন ৫ মিনিট করে পেটের জন্য যোগব্যায়াম করুন। শ্বাস নিতে নিতে পেট ফুলান এবং শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পেট ভিতরে ঢুকান। আপনি টয়লেটে বসেও তা করতে পারেন। ঘৃতকুমারীর শাঁস পানিতে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে এক থেকে দুই গ্লাস পরিমাণ খাওয়া যেতে পারে।

যেসব খাবার বর্জন অথবা খুব অল্প পরিমাণে: রিফাইন্ড চালের তৈরি খাবার, পনির, তেলে ভাজা খাবার, মিষ্টি, চিনি, গুড়, লবণ জাতীয় খাবার, গরু-খাসির মাংস, সব ধরনের ফাস্টফুড (জাংক ফুড), সফট ড্রিংক, বীচি কলা, মদ, কফি ইত্যাদি। কমোড বা উঁচু টয়লেট ব্যবহার না করে প্যান টয়লেট ব্যবহার করা অনেকটাই বিজ্ঞানসম্মত ও প্রাকৃতিক। এতে অর্শ রোগের প্রবণতাও কমে। টয়লেটে আপনি খুব রিলাক্স থাকবেন। এছাড়া কোনোরূপ শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করবেন না। টয়লেটে যাওয়ার পর টয়লেট হওয়ার জন্য পাঁচ মিনিটের বেশি সময় অপেক্ষা করবেন না। বেগ হলে টয়লেটে যেতে দেরি করবেন না। টয়লেটে না গিয়ে অপেক্ষা করা কোন অবস্থাতেই ঠিক নয়। কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ের জন্য মেডিসিন/ডুস ব্যবহার না করাই উত্তম। ফাইবারযুক্ত খাদ্যবস্তুকে মিলে পিষলে, জোরে ঘুঁটলে, ব্ল্যান্ড করলে ফাইবার ভেঙে গিয়ে এক ধরনের আঠালো বস্তু সৃষ্টি করে যা কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত। যদিও আস্ত শস্যদানায় প্রচুর ফাইবার থাকে। 

লেখক: কার্ডিওলজিস্ট, সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here