কোভিড পরবর্তী জটিলতা ও আমাদের করনীয়

0

কোভিড-১৯ একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এটি একটি আরএনএ ভাইরাস। এই ভাইরাসের সংক্রমণ মৃদু থেকে মারাত্মক হতে পারে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বর, অবসাদ, শুষ্ক কাশি, বমি হওয়া, শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, পেটের সমস্যা, মুখের স্বাদ হারিয়ে ফেলা, শরীর দুর্বল হয়ে পড়াসহ আরও বিভিন্ন ধরণের লক্ষণ দেখা যায়। যে সব ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্টের মতো রোগ আগে থেকে ছিলো তারা এই কোভিড-১৯ রোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। 

কোভিড-১৯ রোগ ভাল হয়ে যাওয়ার পর যে শারীরিক সমস্যাগুলো দেখা যায়-

২. ফুসফুসে দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষত তৈরি করে: কাশি, বুকে ব্যথা, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, নিউমোনিয়া, রেসপিরেটরি ফেইলিওর, এআরডিএস, গলা ব্যথা।

৩. স্বাদ ও ঘ্রাণ ক্ষমতা কমে যাওয়া।

৪. যাদের আগে থেকেই হৃদরোগ ছিলো তাদের রোগের তীব্রতা বেড়ে যায় এমনকি মৃত্যু ঝুঁকি পর্যন্ত হতে পারে। আর যাদের হৃদরোগ ছিলোনা তাদের হৃদযন্ত্রের জটিলতা দেখা যায়। হার্ট ফেইলিওর, অ্যাকিউট করোনারি ডিজিজ, অ্যারিথমিয়া।

৫. স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা : তীব্র মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিভ্রম হওয়া, ব্রেইন স্ট্রোক, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের দুর্বলতা বা প্যারালাইসিস, ভারসাম্য রক্ষায় সমস্যা, স্পর্শ বা অনুভূতি বোধের সমস্যা দেখা যায়। 

৬. মাংসপেশী ও হাড়ের সমস্যা :

– গিরা ব্যথা
– মাংসপেশির দুর্বলতা 
– ম্যায়ালজিয়া
– আর্থ্রালজিয়া
– আর্থ্রাইটিস
– বুকব্যথা
– পিঠ ব্যথা
– কোমর ব্যথা
– ঘাড় ব্যথা
 -মাংসপেশিতে ব্যথা
– মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়া

৭. রক্তজমাট বাধা ও রক্তনালির বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।

৮. কিডনি ও লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে: অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি,  ক্রোনিক কিডনি ডিজিজ। 

৯. ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের নিয়ন্ত্রণহীনতা হতে পারে। 

১০. পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা: অ্যাসিডিটি বা গ্যাস হওয়া, পাতলা পায়খানা, ঘন-ঘন পায়খানা হওয়া, বদহজম হওয়া।

১১. মানসিক সমস্যা: বিষন্নতা, মানসিক অস্থিরতা, অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, বুক ধড়ফড় করা, স্ট্রোক।

১২. ঠিকমতো ঘুম না হওয়া।

১৩. ত্বকে লাল দাগ বা র‌্যাশ উঠতে পারে।

১৪. চুল পড়ে যাওয়া।
 
করনীয়:

১. নিয়মিত সুষম খাবার খেতে হবে। যাদের আগে থেকে বিভিন্ন রোগ ছিল তারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে খাবার গ্রহণ করবেন। জানতে হবে- খাবারও ঔষধ, আবার খাবারও অনেক রোগ তৈরি করে। 

২. নিয়মিত হাঁটাচলাফেরা করতে হবে। বয়স ভেদে কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। এরোবিকস ব্যায়াম যেমন: হালকা দৌঁড়ানো, জোড়ে হাঁটা, সাইক্লিং, সাঁতার কাটা, খেলাধুলা করতে হবে।

৩. ফুসফুসের ব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকরী। যেমন- নাক দিয়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে ৩-৬ সেকেন্ড ধরে মুখ দিয়ে ছেড়ে দেয়া, এভাবে ৬-৭ বার করে দৈনিক ২/৩ বেলা করা যাবে। গাছপালা বেষ্টিত উন্মুক্ত স্থানে হাঁটা ও ব্যায়াম শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে কার্যকরী। 

৪. হাড়জোড়া, মাংসপেশীর ক্ষয় ও ব্যথা রোধে ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ও ইলেকট্রোথেরাপি অত্যন্ত কার্যকরী।

৫. চিকিৎসা বিজ্ঞানে পুনর্বাসনের মূলমন্ত্র মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম এপ্রোচ মানে যাদের অনেক গুলো রোগ আছে তাদের বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। 

৬. বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট ও ভিটামিন যেমন ভিটামিন-ডি, ই, এ, মাল্টি ভিটামিন, জিংক, আয়রন, ফলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ, প্রোবায়োটিকস, হায়ালোরোনিক এসিড, গ্লুকোসামাইন, কনড্রোটিন সালফেট, কোলাজেন করোনা পরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা ও জটিলতা কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী। তবে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করতে হবে।
  
লেখক: ফিজিওথেরাপি, ডিজএবিলিটিস ও রিহেবিলিটেশন স্পেশালিস্ট, সহযোগী অধ্যাপক (আইআইএইচএস) ও কনসালটেন্ট ডিপিআরসি, শ্যামলী, ঢাকা। ফোন: ০১৯৮৯০০০২২২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here