ইউরোপজুড়ে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অজ্ঞাত ড্রোন অনুপ্রবেশের ঘটনা ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে। এসব ড্রোনের কারণে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে বেলজিয়ামের ব্রাসেলস বিমানবন্দর এবং লিয়েজ বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে হয়। যদিও এখনও জানা যায়নি এই ড্রোন পাঠাচ্ছে কারা।
একই সময়ে ড্রোন দেখা গেছে ইউরোপের কয়েকটি সামরিক ঘাঁটির আকাশেও। এর মধ্যে এমন ঘাঁটিও আছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র সংরক্ষিত থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। স্ক্যান্ডিনেভিয়া, জার্মানি, পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে একই ধরনের ড্রোন কার্যক্রম নজরে এসেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি নতুন ধরনের হাইব্রিড-ওয়ারফেয়ার। যেখানে ছোট ড্রোন ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
গত দশকে ড্রোন ব্যবহারের বিস্ফোরণ ঘটেছে। বাজার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বৈশ্বিক ড্রোন বাজারের মূল্য ২০২৩ সালে ছিল প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৯১ বিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে। এআই, মেশিন লার্নিং ও রোবোটিক্সে অগ্রগতির কারণে এই চাহিদা তরতর করে বাড়ছে।
ড্রোন এখন শুধু সামরিক নয় গোয়েন্দাগিরি, চোরাচালান এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নজরদারিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে কাউন্টার-ড্রোন প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা দ্রুত বাড়ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধে ছোট ড্রোন ব্যবহার এখন দৈনন্দিন। একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রতি মাসে ১০ হাজার পর্যন্ত ড্রোন হারাচ্ছে, যা যুদ্ধের ধরন পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।
গত এক বছরে ইসরায়েল একাধিক সামরিক ফ্রন্টে ড্রোন হামলার মুখোমুখি হয়েছে। ইরান, হিজবুল্লাহ, হুথি বিদ্রোহী এবং হামাসের চালানো আত্মঘাতী ড্রোন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশটি তৈরি করেছে উন্নত ড্রোন সনাক্তকরণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা, কম উচ্চতায় ওড়া ড্রোন শনাক্ত করতে পারে, বন্ধুত্বপূর্ণ ও শত্রু প্ল্যাটফর্ম আলাদা করতে পারে, খুব দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় করতে পারে।
তেল আবিবের একটি বিনিয়োগকারী সংস্থা পরিচালক লি মোসার বলেন, ইসরায়েল যে প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধান করতে বাধ্য হয়েছে, এখন ঠিক সেই সমস্যার মুখে ইউরোপ।
ড্রোন হামলা ঠেকাতে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ এখন ইসরায়েলের তৈরি ড্রোন-ডিটেকশন এবং ইন্টারসেপশন সিস্টেম চুক্তিবদ্ধভাবে কিনছে। তবে বেশিরভাগ চুক্তি প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয়নি। এ কারণেই একে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপের পানি না ছুঁয়েই মাছ ধরতে চায়

