কেন ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়া যায় না?

0
কেন ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়া যায় না?

ভূমিকম্প এখন আর দূরের কোনো দুর্যোগ নয়। ভূমিকম্প বাংলাদেশের খুব নিকটের দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। যেকোনো সময় ভয়ংকর রূপ নিতে পারে ভূমিকম্প। বাংলাদেশেই প্রাণ হারাতে পারেন লাখ লাখ মানুষ। তবে ঘূর্ণিঝড় কিংবা অনান্য দুর্যোগের আগাম পূর্বাভাস দেয়া গেলেও ভূমিকম্পের বেলায় তা এখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রযুক্তি আর বিজ্ঞান বহুদূর এগিয়ে গেলেও ভূমিকম্প সম্পর্কে কেনো আগাম সতর্কতা দেয়া যাচ্ছে না?

বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি বড় ধরনের জলবায়ু এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের এমনকি সুনামিরও পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে ভূমিকম্প রয়ে গেছে মূলত অপ্রত্যাশিত। ভূমিকম্পের জন্য কোনো নির্ভুল সতর্কতা ব্যবস্থা নেই এবং এই দিকে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়াটা অত্যন্ত কঠিন। কারণ, ভূ-পৃষ্ঠের নিচে যেখানে কঠিন শিলার বিশাল ও অনিয়মিত আকারের খণ্ড, অর্থাৎ টেকটোনিক প্লেটগুলি মিশেছে, সেই ফল্ট লাইনগুলি ভীষণ রকমের জটিল। এই প্লেটগুলি বছরে কয়েক সেন্টিমিটার নড়চেড়ে। আর সেই নড়াচড়াও হয় খুব ধীর। যাকে হিমবাহের গতির সঙ্গে তুলনা করা চলে। পৃথিবীর অভ্যন্তরে থাকা ম্যান্টলে সৃষ্ট স্রোতের ফলেই এই প্লেটগুলির চলাচল করে।

যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক জীববিদ্যার অধ্যাপক ড. কিট ইয়েটসের মতে, সম্ভাব্য বিপর্যয়কর স্থানান্তরের সুস্পষ্ট অগ্রগতির সংকেতগুলিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা এবং পৃথিবীর স্বাভাবিক চলাচলের পটভূমিগত গোলমাল থেকে সেগুলিকে আলাদা করা খুবই কঠিন।

কেবল প্রাকৃতিক গোলমাল নয়, নির্মাণ কাজ, ভারী ট্র্যাফিক এবং এমনকি কনসার্টের মতো মানুষের কার্যকলাপ থেকেও সৃষ্ট কম্পনকে প্রকৃত ভূমিকম্পের সিসমিক কার্যকলাপের সংকেত থেকে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে মার্কিন গায়িকা টেইলর সুইফটের একটি কনসার্ট চলাকালীন প্রায় ৭২ হাজার মানুষের সম্মিলিত নড়াচড়া ২.৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের সমতুল্য সিসমিক কম্পন তৈরি করেছিল।

সিসমোলজিস্টরা বলছেন, ভূমিকম্পের সবসময় ধারাবাহিক পূর্বাভাস বা সতর্কীকরণ সংকেত থাকে না। অর্থাৎ, একটি ভূতাত্ত্বিক গবেষণা সংস্থা বছরের পর বছর ধরে যত্নের সাথে সিসমিক কার্যকলাপের তথ্য সংগ্রহ করলেও কেবল কোনো পূর্ব সতর্কতার অনুপস্থিতির কারণে বিশাল ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হতে পারে।

প্লেটগুলির পরস্পর মিথস্ক্রিয়ার সীমানা অঞ্চলগুলিই হলো ভূমিকম্পের প্রধান উৎপত্তিস্থল। রূপান্তর সীমানা যেখানে প্লেটগুলি একে অপরের গা ঘেঁষে অনুভূমিকভাবে সরে যায়, সেখানেই সাধারণত ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। এই প্লেট সীমানা বরাবর যখন সঞ্চিত চাপ পাথরের শক্তির চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন পাথর ফেটে যায় এবং শক্তি সিসমিক তরঙ্গ রূপে নির্গত হয়, যা ভূমিকম্প ঘটায়।

বড় আকারের ভূমিকম্প অনেকটা বিরল। এটাও নির্ভুল পূর্বাভাসের পথে একটি বড় বাধা বলে বিশেষজ্ঞরা। প্রধান ভূমিকম্পগুলি খুব কমই ঘটে, যা তাদের অগ্রদূতদের বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা বা তথ্যকে অপর্যাপ্ত করে তোলে।

যদিও মেশিন লার্নিং এবং রিয়েল-টাইম পর্যবেক্ষণের মতো প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলি সিসমোলজিস্টদের প্যাটার্ন সনাক্ত করতে এবং ভূমিকম্প শুরু হওয়ার পরে দ্রুত সতর্কতা জারি করার মতো সক্ষমতা দিয়েছে। তবে জাপান এবং ক্যালিফোর্নিয়ার মতো অঞ্চলে ব্যবহৃত আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেমগুলি প্রাথমিক সিসমিক তরঙ্গগুলি ব্যবহার করে কম্পন পৌঁছানোর কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট আগে মানুষকে সতর্ক করে কিন্তু এই ব্যবস্থাগুলি ভূমিকম্প শুরু হওয়ার আগেই পূর্বাভাস দিতে পারে না, বরং যা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে, তাকেই শনাক্ত করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্ভরযোগ্য ভূমিকম্প পূর্বাভাস পদ্ধতির অনুপস্থিতিতে সরকারগুলোর উচিত প্রশমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এর মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী বিল্ডিং কোড, পরিকাঠামোকে নতুন করে উন্নত করা এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করা।

সূত্র: টিআরটি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here