সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যাংক ক্রেডিট সুইস বলছে, তারল্য এবং আমানত সংরক্ষণকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫০ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক (প্রায় ছয় লাখ কোটি টাকা) ঋণ নেবে।
বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাংকটি বিনিয়োগ সংকটে ভুগছিল। গতকাল বুধবার ক্রেডিট সুইসের ইতিহাসে শেয়ারের দরের সবচেয়ে বড় পতনের ঘটনা ঘটে। তবে ঋণ নেয়ার ঘোষণার পর বিনিয়োগ এবং শেয়ার লেনদেনে বেড়েছে।
২০০৮ সালে বৈশ্বিক মন্দার পর এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটতে যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের ন্যাশনাল ব্যাংক- এসএনবি জানিয়েছে, ক্রেডিট সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘মূলধন এবং তারল্য সংশ্লিষ্ট শর্ত পূরণ করেছে’।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অস্থিতিশীল অর্থনীতির সময়ে অন্য ব্যাংকগুলোকে অর্থ ঋণ দিয়ে থাকে। করোনা মহামারি চলাকালীন সময়েও অনেক ব্যাংকই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে।
এমন সময়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো যখন ক্রেডিট সুইসের শেয়ারের দর আশঙ্কাজনক হারে কমছিল এবং বড় ধরনের আমানত সংকট দেখা দিয়েছিল।
সংকট সামাল দিতে সুইস ব্যাংক নিজেদের ঋণের একটা বড় অংশ বাজার থেকে কিনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে রয়ছে ২৫০ কোটি ডলারের মার্কিন বন্ড এবং ৫৩ কোটি ডলার সমমূল্যের ইউরো বন্ড। এসব ঋণপত্র পুনরায় কিনে নেয়ার মাধ্যমে দায় ও সুদ পরিশোধের চাপ অনেকটা কমে আসবে বলে আশা করছে ব্যাংকটি।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উলরিখ ক্যোরনার বলেছেন, ‘‘এইসব পদক্ষেপের মাধ্যমে ক্রেডিট সুইসকে আরো শক্তিশালী করে তোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা আমাদের বিনিয়োগকারীদের সেই বার্তাই দিতে চাই।”
এমন পরিস্থিতি কিভাবে তৈরি হলো?
গতকাল বুধবার ব্লুমবার্গ টিভিতে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংকের আল-খুদাইরি বলেন, তার প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইসে আর বিনিয়োগ করবে না। সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংক ক্রেডিট সুইসের সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার। এরপরই ক্রেডিট সুইসের শেয়ারের দরপতন ঘটে প্রায় ৩০ শতাংশ।
এর আগের সপ্তাহে দুই মার্কিন প্রতিষ্ঠান সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক এবং সিগনেচার ব্যাংক ক্রেডিট সুইসের শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করে। ক্রেডিট সুইসের পক্ষ থেকে বারবার আমানতের নিশ্চয়তা দেয়া হলেও শেয়ার বিক্রি থামানো সম্ভব হয়নি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স দুটি সূত্রকে উল্লেখ করে জানিয়েছে, ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের তত্ত্বাবধানে থাকা অন্য ব্যাংকগুলোকেও ক্রেডিট সুইসের কার্যক্রমের দিকে নজর রাখার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে। মার্কিন ট্রেজারি কর্তৃপক্ষও ক্রেডিট সুইসের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন দপ্তরটির মুখপাত্র।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।