কৃষক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার

0

শত বছর বয়সে মারা গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। স্থানীয় সময় রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের প্লেইনসে নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন জো বাইডেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ দেশটির রাজনীতিবিদরা।

ডেমোক্র্যাট দল থেকে নির্বাচিত জিমি কার্টার ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দেশটির ৩৯ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান তিনি। কার্টার ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জর্জিয়ার প্লেইন্সে তার বাড়িতে ‘হসপিস কেয়ার’-এ ছিলেন। সেখানে তিনি তার স্ত্রী রোজালিন কার্টারের সঙ্গে থাকতেন। তবে ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর মারা যান সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি রোজালিন।  জিমি কার্টার চার সন্তান ও ১১ নাতি-নাতনি রেখে গেছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের তথ্যমতে, জিমি কার্টারই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি তার ১০০তম জন্মদিনে পৌঁছেছিলেন।

২০০২ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান জিমি কার্টার
২০০২ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান জিমি কার্টার।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিমি কার্টারের দায়িত্ব পালন সুখকর ছিল না। অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও কূটনৈতিক সংকট সামলাতে না পেরে এক মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেননি তিনি। পরে মানবিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নিজের সুনাম পুনরুদ্ধার করেন জিমি কার্টার, যার স্বীকৃতি পান ২০০২ সালে। তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।

কৃষক থেকে প্রেসিডেন্ট:

জর্জিয়ার প্লেইনস-এ ১৯২৪ সালের ১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন জেমস আর্ল কার্টার জুনিয়র। পরবর্তী তিনি জিমি কার্টার হিসেবেই পরিচিতি পান। একজন কৃষক ও দোকানির চার সন্তানের একজন ছিলেন তিনি।

জিমি কার্টার যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল একাডেমি থেকে ১৯৪৬ সালে স্নাতক পাস করেন। এরপর পারমাণবিক সাবমেরিন কর্মসূচিতে কাজ করেন। পরবর্তীতে এই চাকরি ছেড়ে পরিবারের বাদাম চাষাবাদের ব্যবসা দেখভালের দায়িত্ব নেন।

কিশোর বয়স থেকেই সাউদার্ন ব্যাপ্টিস্ট সানডে স্কুলের শিক্ষক ছিলেন জিমি কার্টার। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনেও শক্তিশালী নৈতিকতার চেতনা নিয়ে আসেন তিনি। কোনো রাখঢাক ছাড়াই নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয়টি প্রকাশ করতেন জিমি কার্টার।

স্ত্রী রোজলিন কার্টারের সঙ্গে জিমি কার্টার। রোজলিন গত বছর মারা যান
স্ত্রী রোজলিন কার্টারের সঙ্গে জিমি কার্টার। রোজলিন গত বছর মারা যান।

জিমি কার্টার একপর্যায়ে কোটিপতি হন। জর্জিয়া থেকে কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জর্জিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান। ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

জিমি কার্টারের মৃত্যুর পর তার ছেলে চিপ কার্টার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমার বাবা একজন নায়ক ছিলেন; শুধু আমার কাছেই নন, যাঁরা শান্তি, মানবাধিকার এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় বিশ্বাস করেন এমন সবার কাছেই।’

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের স্মৃতিকথা থেকে শুরু করে শিশুসাহিত্য— দুই ডজনেরও বেশি বই লিখেছেন জিমি কার্টার। ধর্মীয় বিশ্বাস ও কূটনীতি নিয়েও তিনি লেখালেখি করেছেন। ২০১৮ সালে তার ‘ফেইথ: আ জার্নি ফর অল’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here