কুমিল্লায় ঈদ বাজারে রাজত্ব করছে খাদি

0

কুমিল্লায় ঈদ বাজারে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে খাদির পাঞ্জাবি ও থ্রি-পিস। এছাড়া ফতুয়া, শাড়ি, বিছানার চাদর ও বালিশের কভারের চাহিদাও দেখা গেছে। ঐতিহ্য আর আধুনিক ডিজাইনে ভোক্তাদের মন মাতাচ্ছে খাদির কাপড়। বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়লেও খুব একটা বাড়েনি খাদি পোশাকের দাম। কাপড়ের মান ভালো ও রঙ পাকা হওয়ায় ক্রেতারা খাদিতে ঝুঁকছেন।

কুমিল্লার খাদির পোশাকের সুখ্যাতি দেশজুড়ে। কুমিল্লায় আসলে খাদি কাপড় ছাড়া খালি হাতে ফিরেছেন এমন লোক কমই পাওয়া যাবে। বর্তমানে কুমিল্লা শহরে খাদির নাম সংযুক্ত দোকান আছে চার শতাধিক। নগরীর রাজগঞ্জ বাজারের পশ্চিম দিক থেকে কান্দিরপাড়ের রামঘাটলা পর্যন্ত এসব দোকানের অবস্থান। খাদির কাপড় বিচ্ছিন্নভাবে যাচ্ছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে কুমিল্লা জেলায় দেড় হাজার পরিবার এই পেশায় জড়িত। খাদি কাপড় বিক্রির আলাদা মার্কেট হিলটন টাওয়ার রয়েছে নগরীর রাজবাড়ি এলাকায়। 

বিক্রেতাদের সূত্র জানায়, পাঞ্জাবি ৪০০-১৪০০টাকা। শার্ট ৬০০-৭০০টাকা। থ্রি-পিস ৬০০-১৮০০টাকা। শাড়ি ৭৫০- ১৮০০টাকা দামে প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে। 

সাংস্কৃতিক সংগঠক জহিরুল হক দুলাল বলেন, খাদির গোড়াপত্তন হয়েছে একশ’ বছরের বেশি সময় আগে। সারা বিশ্বেই কুমিল্লার শাড়ি ও খাদি কাপড়ের নামডাক ছিল। স্বদেশি আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধী বিদেশি পণ্য বয়কটের ডাক দেন। মোটা কাপড়, মোটা ভাত-সর্বত্র এমন আওয়াজ ওঠে। স্বদেশি আন্দোলনের পর খাদি কাপড়ের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠে। কুমিল্লার মানুষ খাদি কাপড় পছন্দ করতেন। বড় বড় নেতারা খাদির পায়জামা, চাদর, পাঞ্জাবি পরে গৌরববোধ করতেন। খাদি কুমিল্লাকে ব্র্যান্ডিং করে। 

ক্রেতা মঞ্জুর মোরশদে থাকেন আমেরিকা। এবার দেশে এসেছেন পরিবারের সাথে ঈদ করতে। তার শ্বশুর বাড়ি ভারতের হায়দরাবাদে। শ্বশুর প্রথম বাংলাদেশে জামাইয়ের বাড়ি দেখতে এসেছেন। তিনি শ্বশুরকে সাথে নিয়ে এসেছেন খাদি কাপড় কিনতে। তিনি বলেন, বাবার সাথে এক সময় খাদি কাপড় কিনতাম। এখন নিজে এলাম পরিবারের জন্য পোশাক কিনতে। আজ সাথে শ্বশুর এসেছেন। তিনি এখানের খাদি কাপড় দেখে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

তানজিনা ইসলাম এসেছেন বাবার জন্য খাদির পাঞ্জাবি কিনতে। তিনি বলেন, খাদির কাপড়ের রং পাকা। কম দামে টেকসই পোশাক।  

ময়নামতি থেকে পরিবার নিয়ে আসা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ঈদ উৎসবে খাদির পোষাকে শেকড়ের টান অনুভব করি। তাই পরিবারের জন্য খাদির পোষাক ক্রয় করি। এবার নিজের জন্য পাঞ্জাবি আর পরিবারের জন্য থ্রিপিস কিনেছি।

খাদিঘরের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার রাহা বলেন, খাদি পোষাকের কোয়ালিটিতে আমরা কোনো আপোষ করি না। তাই কাপড়ের রং থাকে পাকা। দামেও সাশ্রয়ী। ১৯২১ সালের প্রেক্ষাপট ও চাহিদা এক নয়। বর্তমানে খাদি শিল্পে অনেক নতুন নতুন ডিজাইন এসেছে। দাদা, বাবা, ছেলে ও নাতি মিলে আমরা চার প্রজন্মের চাহিদা মিটিয়ে আসছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here