বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে কুড়িগ্রামে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে প্রতিদিন গৃহহীন হয়ে পড়ছেন শত শত পরিবার। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও ঘরবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। প্রতিবছর নদনদীর পানি কমার সাথে সাথে এ জেলায় নদী ভাঙনের শিকার হন অনেক পরিবার।
দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অভাবে নদী ভাঙন এখন নিত্য নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদী তীরবর্তী অনেক মানুষ নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে প্রতিবছর। সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে চিলমারী উপজেলার বেশ কিছু এলাকা ও রাজারহাট উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় নদী ভাঙন গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রবল আকার ধারণ করেছে। চিলমারীতে একই ব্যক্তির বাড়ি দুই থেকে তিনবার করে ভেঙে এখন দিশেহাো হয়ে পড়েছেন। ভাঙন কবলিত মানুষজন যুদ্ধ করে টিকে রয়েছেন। ভাঙনের শিকার হয়ে নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতিসহ কয়েকটি গ্রাম। আর হুমকির মুখে পড়েছে চিলমারী সরকারী বিদ্যালয় ও আশ্রয়ণ কেন্দ্র। এছাড়াও ইতোমধ্যে কয়েকশত বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখানকার মানুষজন হয়ে পড়েছেন গৃহহীন অসহায়। অন্তত দুই শতাধিক পরিবার ইতোমধ্যেই গৃহহীন হয়েছেন। ব্রহ্মপুত্রের থাবায় চিলমারী সদর ইউনিয়নের শাখাহাতি, কড়াইবড়িশালসহ বিভিন্ন স্থানে এখন নদী ভাঙন। প্রতিদিন ব্রহ্মপুত্রের তাণ্ডবলীলায় ভাঙছে বাড়িঘর, বিলীন হচ্ছে ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের মুখে রয়েছে শাখাহাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাখাহাতি আশ্রয়ণ কেন্দ্রসহ সরকারী বেশকিছু স্থাপনা। এছাড়াও হুমকির মুখে রয়েছে গ্রামের শতশত বাড়িঘরসহ হাজারো একর ফসলি জমি। এছাড়াও ইতোমধ্যে ভাঙনে বিলীন হয়েছে সাব মেরিন ক্যাবল ও বিদ্যুৎ খুঁটি।
চিলমারী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, যে হারে ব্রহ্মপুত্র নদ ভাঙছে এর প্রতিরোধ না হলে চিলমারী ইউনিয়নের পুরো এলাকাসহ সরকারী স্কুল, আশ্রয়ণ কেন্দ্র নদী গর্ভে চলে যাবে।
অপরদিকে, তিস্তা নদীর প্রবল ভাঙনে ঝুঁকিতে পড়েছে জেলার রাজারহাট উপজেলার চর খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা স্থাপনা। চলতি বছরেই ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ৯টি স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো ১০টি। ফলে এসব স্কুলে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থী। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই গত এপ্রিল মাসেই জেলার তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন পয়েন্টে শুরু হয় নদী ভাঙন। অব্যাহত ভাঙনে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হওয়ার পাশাপাশি নদীগর্ভে চলে গেছে ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ব্যাঘাত ঘটছে। যদিও শিক্ষা বিভাগ বিকল্প পদ্ধতিতে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। সদর উপজেলার ঝুনকার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর কাছাকাছি চালাঘর তুলে অস্থায়ীভাবে পাঠদান কার্যক্রম চলতে থাকে।
চিলমারী উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম জাকির হোসেন জানান, দফায় দফায় বন্যা হলেও নদী ভাঙনে বিলীন তিনটি স্কুল অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করে এসব শিক্ষার্থীর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার জানান, যেসব স্কুল নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে, সেখানে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় অস্থায়ীভাবে চালাঘর তুলে পাঠদান অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে যখন বরাদ্দ আসবে তখন পুণঃনির্মাণ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলা নদীতে নদী ভাঙন চলছে। এখন প্রায় ৩০টি পয়েন্টে নদী ভাঙন চললেও আমরা বালুর বস্তা ফেলানো ও জিও ব্যাগ দিয়ে তা প্রতিরোধে চেষ্টা করছি। এছাড়াও নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ায় কয়েকটি স্কুল এরই মধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।