কামিন্সের ব্যাটে রোমাঞ্চকর জয়ে অ্যাশেজ শুরু অস্ট্রেলিয়ার

0

শেষ দিনের প্রথম সেশন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পরও টেস্ট ক্রিকেট রোমাঞ্চ ছড়াল তার নানা রূপ দেখিয়ে। এক প্রান্তে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে দলকে টানলেন উসমান খাওয়াজা। ম্যাচ একটু একটু করে হেলে পড়ল অস্ট্রেলিয়ার দিকে। খাওয়াজাকে ফিরিয়েই আশা জাগাল ইংল্যান্ড। কিন্তু পেরে উঠল না তারা শেষ পর্যন্ত। স্নায়ুর চাপ সামলে প্যাট কামিন্সের মহমূল্যবান এক ইনিংস ও ন্যাথান লায়নের সঙ্গে নবম উইকেট জুটির নৈপুণ্যে রোমাঞ্চকর জয় পেল অস্ট্রেলিয়া। 

এজবাস্টনে অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার জয় ২ উইকেটে। ২৮১ রানের লক্ষ্য তারা ছুঁয়ে ফেলে শেষ দিনের ৫.৩ ওভার বাকি থাকতে।  শেষ দুই দিনে বারবার আলোচনায় আসছিল ১৮ বছর আগের এক ম্যাচ। এই মাঠেই ২০০৫ সালে ২৮২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ২ রানে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। এবার শেষ হাসি তাদের মুখেই।  যেখানে শেষের নায়ক কামিন্স। ৭৩ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ৪৪ রানের ইনিংস খেলে দলের জয় নিয়ে ফেরেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। 

বার্মিংহামে মঙ্গলবার (২০ জুন) শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ১৭৪ রান, ইংল্যান্ডের ৭ উইকেট। বৃষ্টিতে প্রথম সেশন ভেস্তে যাওয়ার পর খেলা শুরু হয় স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া দুইটায়। দিনের সম্ভাব্য ৬৭ ওভার বাকি তখন। আগের দিন মার্নাস লাবুশেন ও স্টিভেন স্মিথকে বিদায় করে ইংল্যান্ডকে লড়াইয়ে ফেরানো স্টুয়ার্ট ব্রড শেষ দিন বেশিদূর যেতে দেননি ‘নাইটওয়াচম্যান’ স্কট বোল্যান্ডকে। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করে কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি ২০ রান করে।     

এক প্রান্তে ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে ছিলেন খাওয়াজা। ট্রাভিস হেড প্রথম ১৩ বলে করেন ১ রান। পরে তার ব্যাট থেকেই আসে শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বাউন্ডারি। কাটা আঙুল নিয়ে বোলিং করা মইন আলির তিন বলের মধ্যে তিনি মারেন আরও দুটি চার। ওই ওভারেই অফ স্পিনারের দারুণ ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ দেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। অস্ট্রেলিয়ার দরকার তখনও ১৩৮ রান, ইংল্যান্ডের চাই ৫ উইকেট। 

শেষ দিনে খেলা প্রথম ৫০ বলে খাওয়াজা করেন মাত্র ৭ রান। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ১৪৩ বলে। ৩৪ বছরের মধ্যে প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার হিসেবে দেশের বাইরে অ্যাশেজের কোনো টেস্টে সেঞ্চুরি ও ফিফটি করলেন তিনি। তার আগে সবশেষ এমন কিছু করে দেখিয়েছিলেন মার্ক টেইলর। ১৯৮৯ সালে লিডসে ১৩৬ ও ৬০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। 

ক্যামেরন গ্রিনের সঙ্গে খাওয়াজার অবিচ্ছিন্ন ৪০ রানের জুটিতে চা-বিরতিতে যায় অস্ট্রেলিয়া। শেষ সেশনে ৩৮ ওভারে দরকার ছিল ৯৮ রান। বিরতির পর গ্রিনকে ফিরিয়ে ৪৯ রানের জুটি ভাঙার পাশাপাশি আবার লড়াই জমিয়ে তোলেন অলি রবিনসন। অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকা বল স্টাম্পে টেনে আনেন ২৮ রান করা গ্রিন। আক্রমণে এসে নিজের দ্বিতীয় ওভারে খাওয়াজাকে থামান বেন স্টোকস। স্লোয়ার বল বাঁহাতি ওপেনারও টেনে টানেন স্টাম্পে।  তখনও অস্ট্রেলিয়ার দরকার ৭২ রান।  এরপর দলকে এগিয়ে নেন অ্যালেক্স কেয়ারি ও প্যাট কামিন্স। 

৮০ ওভারের পর নতুন বল না নিয়ে পুরনো বলেই চালিয়ে যায় ইংল্যান্ড। তাতেই মেলে আরেকটি সাফল্য। এই ওভারে রুটকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন কেয়ারি। সেখান থেকে কামিন্স ও লায়নের ওই জুটি। রুটের এক ওভারে কামিন্সের দুই ছক্কায় আবার জমে ওঠে লড়াই। পরের ওভারে লায়নের কঠিন ক্যাচ নিতে পারেননি স্টোকস। এরপর একটু একটু করে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান কামিন্স ও লায়ন। দরকার যখন আর ৩ রান, রবিনসনের অফ স্টাম্পের বল থ্যার্ড ম্যান দিয়ে খেলেন কামিন্স, ফিল্ডার সীমানায় বল আটকাতে ব্যর্থ হওয়ার পর উল্লাসে মেতে ওঠে অস্ট্রেলিয়া শিবির।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৯৩/৮ ডিক্লে. 

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৩৮৬ 

ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ২৭৩ 

অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৮১) (আগের দিন ১০৭/৩) ৯২.৩ ওভারে ২৮২/৮ (খাওয়াজা ৬৫, বোল্যান্ড ২০, হেড ১৬, গ্রিন ২৮, কেয়ারি ২০, কামিন্স ৪৪*, লায়ন ১৬*; অ্যান্ডারসন ১৭-১-৫৬-০, ব্রড ২১-৩-৬৪-৩, রবিনসন ১৮.৩-৭-৪৩-২, মইন ১৪-২-৫৭-১, রুট ১৫-২-৪৩-১, স্টোকস ৭-২-৯-১) 

ফল: অস্ট্রেলিয়া ২ উইকেটে জয়ী 

সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে প্রথমটির পর ১-০তে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া 

ম্যান অন দা ম্যাচ: উসমান খাওয়াজা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here