কাঠঠোকরার শিমুল প্রেম

0

প্রকৃতিতে প্রতিনিয়ত বিচিত্রসব ঘটনা ঘটছে। এর কোনটি মানুষের দৃষ্টি আড়ালে। আবার কোনটি দৃষ্টি গোচরে। কিছু কিছু দৃশ্য প্রকৃতি প্রেমীদের মনে ভাবের খোরাক এনে দেয়। চিন্তাশীলদের মাঝে জোগায় চিন্তার খোরাক। কবি সাহিত্যিকরাা খুঁজে পান কিছু একটা লেখার উপমা। তেমনি এক অপূর্ব দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে কাঠঠোকরা ও শিমুলের প্রেমের মুগ্ধতার স্থির চিত্র। সম্প্রতি এই ছবিটি তুলেছেন লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ থেকে কবি, লেখক ও ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার রানা মাসুদ। 

শিমুল ও কাঠঠোকরা সম্পর্কে জানাগেছে, শিমুলের শীতের শেষে পাতা ঝরে যায়। ফাল্গুন মাসে ফুলের কুঁড়ি আসে এবং চৈত্র মাসে বড় ও উজ্জ্বল লাল রঙের ফুল ফোটে। তখন মনে হয় যেন গাছে আগুন লেগেছে। ফুলের বৃতি মোটা ও মখমলের ন্যায় নরম। ফুল এক ধরণের স্বাদু তরল পদার্থ সঞ্চিত থাকে, তাই পাখির পিপাসা মেটাবার জন্য শিমুল গাছে ভিড় করে। শিমুল একটি পাতাঝরা বড় বৃক্ষ, ১৫ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। শাখা-প্রশাখা কম, সরল এবং বৃত্তাকারে চারিদিকে বিস্তত।  গাছের গায়ে বহু কাঁটা হয়। এগুলোর অগ্রভাগ সরু ও তীক্ষ্ণ এবং গোড়াটা বেশ মোটা। শিমুলের পাতার গঠন এমন যেন একটি লম্বা বোঁটায় ছড়ানো হাতের পাঞ্জা। মোচোকৃতি ফল হয় যা পাকে এপ্রিল মাসে। ফলগুলি গাছ থেকে ভেঙে না নিলে আপনাআপনি ফেটে গিয়ে তুলা ও বীজ বেরিয়ে যায়। পাকা ফল গাছ থেকে সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে তুলা থেকে বীজ আলাদা করে নার্সারি বেডে বীজ বপন করতে হয়। বীজ ফিকে কৃষ্ণবর্ণ, একটি ফলে অনেক বীজ থাকে। বীজের অঙ্কুরোদগম হার শতকরা ৭৫ ভাগ এবং তা ১৫-২০ দিনে গজায়। তবে বীজ শুকানো পাত্রে ৬ থেকে ১২ মাস সংরক্ষণ করা যায়। শিমুল সাধারণত কাজ করে রক্তনালীতে ও মুত্রনালীতে  ওষুধি হিসেবে কাজ করে। এছাড়া শিমুলের  বহু ওষুধি গুণ রয়েছে।
 
 এদিকে কাঠঠোকরা সম্পর্কে জানাগেছে,  অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মাদাগাস্কার আর দুই মেরু ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলেই কাঠঠোকরা দেখা যায়। বেশিরভাগ কাঠঠোকরার প্রজাতি বন বা বৃক্ষপূর্ণ অঞ্চলে বসবাস করে। কয়েক প্রজাতির কাঠঠোকরার আবাস মরুভূমি ও পাথুরে অঞ্চলে। তবে শ্বেতচঞ্চু কাঠঠোকরা নামের দুটি প্রজাতিকে প্রায় ত্রিশ বছর যাবৎ বিলুপ্ত বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলা কাঠঠোকরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার বলীয়ান। এটি আমাদের দেশে সচারচর দেখা যায়। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। শহুরে এলাকায় বসবাস করে এমন অল্পসংখ্যক কাঠঠোকরার মধ্যে বাংলা কাঠঠোকরা একটি।  পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারার পার্থক্য তাদের চাঁদি ও ঝুঁটির রঙে। পুরুষ কাঠঠোকরার চাঁদি ও ঝুঁটি টকটকে লাল। স্ত্রী কাঠঠোকরার ঝুঁটি লাল কিন্তু চাঁদি কালো ও সাদা ফুটকিযুক্ত। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ অনুজ্জ্বল, বাকি সব স্ত্রী পাখির মতো। তবে স্ত্রী পাখির মতো চাঁদির কালো অংশ থাকে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here