কাক দিয়ে শহর পরিষ্কার? সুইডিশ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী?

0
কাক দিয়ে শহর পরিষ্কার? সুইডিশ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী?

বিশ্বজুড়ে আলোচনা তৈরি করা প্রশ্নটি আবারও সামনে এসেছে। কাককে কি সত্যিই রাস্তা পরিষ্কারে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়? কয়েক বছর আগে এই ধারণা নিয়ে হাজির হয়েছিল সুইডেনের ছোট একটি স্টার্টআপ Corvid Cleaning AB। 

তাদের পরিকল্পনা ছিল, কাককে সিগারেটের অবশিষ্ট তুলে আনতে শেখানো, আর বিনে ফেলা মাত্রই পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে খাবার।

বিষয়টি এতটাই অভিনব ছিল যে ২০২২ সালে এক ঝটকায় বিশ্বের নানা দেশের গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়ে ওঠে। পরিকল্পনার ভিত্তি ছিল অপারেন্ট কন্ডিশনিং। ঠিক যেমন পায়রাকে খাবার দিয়ে কাজ শেখানো হয়, বা পোষা কুকুর নির্দেশ মানলে পুরস্কার পায়। কাক সিগারেটের অবশিষ্ট বিনে ফেলবে, ক্যামেরা বস্তুটি শনাক্ত করবে, তারপর মেশিন খাবারের পেলেট ছেড়ে দেবে।

ভাবনাটি ছিল। এক কাক শিখলে বাকিরা অনুসরণ করবে, আর খুব কম খরচে শহরের ময়লা পরিষ্কারের একটা দল তৈরি হয়ে যাবে। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির মতো রোমাঞ্চকর এই ধারণায় মানুষ তখন কল্পনায় দেখতে শুরু করেছিল, ডানাওয়ালা ছোট পরিচ্ছন্নতাকর্মী দৌড়ে বেড়াচ্ছে রাস্তায়।

কিন্তু শুরু থেকেই সতর্কতা জানিয়েছিলেন সুইডেনের গবেষকেরা। সিগারেটের অবশিষ্ট ভরা থাকে নিকোটিন, টার, মাইক্রোপ্লাস্টিকসহ নানা ক্ষতিকর রাসায়নিক। বন্য কাককে এসব তুলতে দেওয়া প্রাণী কল্যাণের প্রশ্ন তোলে এমনটাই সতর্ক করেন স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক। তিনি বলেন, যদি ক্ষতির সম্ভাবনা পুরোপুরি বাদ দেওয়া না যায়, তাহলে এই প্রকল্প নৈতিক সীমা অতিক্রম করতে পারে।

এ অবস্থায় সুইডেনে সরকারি অর্থায়নে গবেষণা শুরু হয়—“Bird Litter Picking: Nicotine Items and Health”—যেখানে মূল বিবেচনা ছিল, কাকের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের পরীক্ষা এগোনো উচিত নয়।

এরপর ধীরে ধীরে নীরবতা নেমে আসে। কোনো তথ্যভিত্তিক রিপোর্ট প্রকাশ পায়নি, বাড়েনি শহর পরিষ্কারে কাকের অবদান নিয়ে আলোচনাও। মাঝে মাঝে বিশ্বের গণমাধ্যমে বিষয়টি নতুন উদ্যোগ হিসেবে ফিরে আসলেও প্রকল্পের প্রকৃত অবস্থা অস্পষ্টই রয়ে গেছে।

বাস্তব চিত্রটি অনেকটাই নিরাশার। অল্প সংখ্যক কাককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। একটি ছোট পাইলট প্রকল্পও চালু হয়েছিল। কিন্তু কতগুলো সিগারেট সংগ্রহ হলো, মেশিনগুলি কার্যকর ছিল কি না, বা আর্থিকভাবে মানুষের তুলনায় সত্যিই কম খরচে কাজ হতো কি না—এসবের কোনো তথ্য প্রকাশ পায়নি।

সবশেষ নিশ্চিত খবর আসে সুইডেনের কোম্পানি রেজিস্ট্রি থেকে। ২০২৫ সালের অক্টোবরে Corvid Cleaning AB দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। নথিতে দেখা যায়—কোম্পানির কোনো কর্মী ছিল না, আয় ছিল মাত্র ৭ হাজার সেক (প্রায় ৭৫০ ডলার), আর কোনোভাবেই তারা বিশ্বজুড়ে কাক-নির্ভর পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে ছিল না।

সূত্র: উবার গিজমো

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here