বাংলাদেশ সোসাইটির তহবিলে বিদায়ী কমিটির ৪ কর্মকর্তার নামে ৬০টি কবরের জায়গা ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া, নতুন কমিটির শপথ গ্রহণের দিন আরো প্রায় আড়াই লাখ ডলার ব্যয় করা হয়েছে ৩৬০ কবরের জায়গা ক্রয় বাবদ। শুধু তাই নয়, নতুন কমিটির কাছে যে হিসাব সাবমিট করা হয়েছে তার সাথে অভিষেক উৎসবে প্রদত্ত পরিমাণের অনেক কম। এ ধরনের আরো কিছু অনিয়ম-গড়মিলের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে রব-রুহুলের নেতৃত্বাধীন বিদায়ী কমিটির বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, গত নির্বাচনে পরাজিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জাহিদ মিন্টুর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন একটি পরিকল্পিত গোরস্থানের কবর ক্রয়ের নামে দু’লাখ ৪০ হাজার ডলার গত ১৬ ডিসেম্বর ব্যয়ের তথ্য দেয়া হয়েছে। অথচ এই গোরস্থানের কাজ এখনো কাগজে-কলমেই সীমিত বলে কথিত গোরস্থান প্রকল্পে জড়িত একাধিক ব্যক্তি নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন।
আরো উল্লেখ্য, নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টুর সাংগঠনিক মেন্টর হিসেবে পরিচিত মো. রব মিয়া, যিনি বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি হিসেবে এই চুক্তিপত্র করেছেন। অভিযোগ রয়েছে গত কয়েক বছরের আয়-ব্যয়ের অন্যান্য হিসাব নিয়েও। সাধারণ সদস্য ফি এবং আজীবন সদস্য ফি’র ব্যাপারে পেশকৃত হিসাবেও গড়মিলের গন্ধ পেয়েছেন কর্মকর্তারা। এহেন অবস্থায় বাংলাদেশ সোসাইটি পুনরায় আদালতে গেলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। অন্যায়ের প্রতিকারের জন্যে মামলা দায়েরকারীকে ইতিপূর্বে ‘মামলাবাজ’ আখ্যা দিয়ে প্রকারান্তরে বাংলাদেশ সোসাইটির অর্থ হরিলুটের ঘটনাবলিকে আড়ালের পথ খোঁজা হয়েছে বলে অনেকে ধারণা করছেন। তবে, গত কমিটির বিরুদ্ধে উত্থাপিত তথ্য-উপাত্ত সন্ধান করতে ৮ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটি বিদায়ী কমিটির বক্তব্য এবং গড়মিলের তথ্য সংগ্রহ করবে।
এদিকে, বাংলাদেশ সোসাইটির নতুন কার্যকরী কমিটি ও বোর্ড অব ট্রাস্টির যৌথ সভা গত ১২ জানুয়ারি রবিবার দুপুরে বাংলাদেশ সোসাইটির নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম। সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীর পরিচলনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টির অন্যতম সদস্য মোঃ আক্তার হোসেন, আজিমুর রহমান বোরহান, মোঃ এমদাদুল হক কামাল, আব্দুল হাসিম হাসনু, ওয়াসি চৌধুরী, মোঃ শাহজাহান সিরাজী ও মোঃ আতরাউল আলম এবং কার্যকরী কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি- মহিউদ্দিন দেওয়ান, সহ-সভাপতি- কামরুজ্জামান কামরুল, সাংগঠনিক সম্পাদক- ডিউক খান, জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক- রিজু মোহাম্মদ, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক- জামিল আনসারী, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক- আশ্রাব আলী খান লিটন, স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক- মোহাম্মদ হাসান (জিলানী), কার্যকরি সদস্য-জাহাঙ্গীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মোহাম্মদ সিদ্দিক পাটোয়ারী, মুনসুর আহমদ ও হাছান খান।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভা শুরু হয়। তেলাওয়াত করেন সমাজকল্যাণ সম্পাদক জামিল আনসারী। এ সময় সোসাইটির প্রয়াত সকল কর্মকর্তা ও প্রয়াত প্রবাসীদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া-মোনাজাত করা হয়।
যৌথ সভার শুরুতেই কার্যকরী কমিটির উপস্থিত কর্মকর্তাদের বোর্ড অব ট্রাস্টির উপস্থিত সদস্যগণের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী। তারপর উপস্থিত বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যদের কার্যকরী কমিটির সদস্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন সংগঠনের সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম। এসময় একে অন্যের সাথে পরিচিত হন এবং সবাই সবার সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে কুশল বিনিময় করেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম বলেন, আজকের এই যৌথ সভার মূল উদ্দেশ্য হলো নবনির্বাচিত কার্যকরী পরিষদের সাথে বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া। তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছি অল্পদিন হল। বিদায়ী কমিটির কাছ থেকে কি পেলাম এবং বর্তমান পরিস্থিতি কি তা বিস্তারিতভাবে বোর্ড অব ট্রাস্টিকে অবহিত করাও আজকের এ সভার অন্যতম এজেন্ডা।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান ছাড়াও কার্যকরী পরিষদের অন্য সদস্যরা উপস্থিত সবাইকে অবহিত করেন যে, বিদায়ী কমিটির (২০২৩-২০২৪) নানা কর্মকান্ডে গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নানা গড়মিল পাওয়া গেছে। বিশেষ করে বিদায়ী কমিটির কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণের সময় অনেক কিছু সঠিকভাবে বুঝে পাননি বলে তারা সবাইকে অবহিত করেন। একইসাথে নানা অসঙ্গতির কথাও জানান উপস্থিত সবাইকে। কবর এবং ব্যাংক খাতে লেনদেনে অনেক গড়মিল রয়েছে বলেও সভাকে অবহিত করেন তারা। এ সময় তারা আরো উল্লেখ করেন যে, গত ১৬ ডিসেম্বর নবনির্বাচিত কার্যকরী পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠানে বিদায়ী কোষাধ্যক্ষ নওশাদ হোসেন তার দেয়া বক্তব্যে সবাইকে অবহিত করেন ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ডলার সংগঠনের ফান্ডে রেখে যাচ্ছেন । পরবর্তীতে নতুন কোষাধ্যক্ষের কাছে ব্যাংক ট্রান্সফার ও হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার সময় টাকার পরিমাণে ব্যাপক গড়মিল পাওয়া যায়। বিশেষ করে গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে বিদায়ী কমিটির কর্মকর্তারা অভিষেকের দিন অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর ২ লক্ষ ৪০ হাজার ডলার ব্যয় করে ৩৬০ টি কবর কিনেন-যা এখনো পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী নয়।
এ সময় তারা আরো বলেন, সোসাইটির বিগত দিনের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। দায়িত্ব ও হিসাব বুঝে নেয়ার সময় বর্তমান কমিটি যে গড়মিল পেয়েছে তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হলে বিদায়ী কমিটির কাছ থেকে জানতে হবে।
পরবর্তীতে বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যরা এব্যাপারে তাদের বক্তব্য ও মতামত তুলে ধরেন। এ সময়
তারা বলেন যে, সোসাইটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বড় ধরনের কোন অর্থ খরচ করতে হলে অবশ্যই বোর্ড অব ট্রাস্টির মতামত এবং অনুমতি নিতে হয়। কবর ক্রয়ের বিষয়ে সে ধরনের কোন কিছুই বিগত কমিটি করেনি। তারা আরো বলেন, সোসাইটিকে জবাবদিহিতামূলক সংগঠন করতে হলে এ ধরনের কর্মকান্ডের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় সকলের মতামতের ভিত্তিতে একটি যৌথ-কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি আগামী ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে বিদায়ী কমিটির কাছ থেকে এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য জানতে চাইবে, একই সাথে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে। এই কমিটির সদস্যরা হলেন বোর্ড অব ট্রাস্টির অন্যতম সদস্য মোঃ আক্তার হোসেন ও আজিমুর রহমান বোরহান এবং কার্যকরী কমিটির কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন দেওয়ান, আবুল কালাম ভুঁইয়া, মফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া রুমি, রিজু মোহাম্মদ এবং পদাধিকার বলে সংগঠনের সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী এ কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন।