কক্সবাজারে সুপারির বাম্পার ফলন

0
কক্সবাজারে সুপারির বাম্পার ফলন

কক্সবাজারে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার সুপারি ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা হয়। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কক্সবাজারে সুপারির ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে নতুন সুপারি আসতে শুরু করেছে। ভালো দামও পাচ্ছেন চাষিরা। অনুকূল আবহাওয়া ও সঠিক পরিচর্যায় ভালো ফলন হয়েছে বলে জানান চাষি ও সংশ্লিষ্টরা। আকারে বড় ও স্বাদে মজা কক্সবাজারের সুপারি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আলাদা কদর রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে সুপারি আমদানি অনেকটা বন্ধ রয়েছে। এতে কক্সবাজারে সুপারির চাহিদা বেড়েছে। এ ছাড়া উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের ৩৩টি ক্যাম্পও সুপারির বড় বাজার।

সুপারির সবচেয়ে বড় বাজার বসে মেরিন ড্রাইভ লাগোয়া উখিয়ার সোনারপাড়া বাজারে। সপ্তাহে দুই দিন হাট বসলেও প্রতিদিনই এখান থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে ট্রাক ও পিকআপ ভর্তি করে নিয়ে যান সুপারি। গত রবিবার ওই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সুপারি বেচাকেনার ধুম পড়েছে। পুরো বাজারে সুপারির বড় বড় স্তুপ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে সুপারির বাজার সরগরম থাকে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, জেলার অন্তত ৫০টি বাজারে এখন সুপারির বেচাকেনা চলছে। আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত বাজারে পাকা সুপারি বিক্রি চলবে। এরপর শুকনা ও ভেজা সুপারি বাজারে উঠবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. বিমল কুমার প্রামাণিক।

তিনি বলেন, এ বছর ফলন যেমন ভালো হয়েছে, দামও পাচ্ছেন চাষিরা। গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে চাষও বেড়েছে। ড. বিমল কুমার প্রামাণিক জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়েছে।

সুপারি চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন না হওয়ায় এবং বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ায় সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শ, কীটনাশক, সার প্রয়োগও ভূমিকা রেখেছে। মেরিন ড্রাইভে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সুপারি বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা ১০-২০ কন করে সুপারি নিয়ে যাচ্ছে। ক্রেতারা জানান, গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে সুপারির দামও কম।

স্থানীয় কয়েকজন সুপারী ব্যবসায়ী জানান, টেকনাফ শামলাপুর বাজার, জাহাজপুরা বাজার, টেকনাফ বাজার, উখিয়া সদর, সোনাপাড়া বাজার, মরিচ্যা বাজার, কোর্টবাজার থেকে সুপারি দেশের বিভিন্ন আড়তে চালান হয়। সুপারি বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন।

টেকনাফের উপজেলার বাহারছড়ার চাষি জাগের হোসেন বলেন, এক কানি (৪০ শতক) জমিতে লাগানো ৪৫৮টি গাছে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে সুপারি ধরেছে ৪০০-৫০০টি। এবার সুপারির বাজারমূল্য ভালো থাকায় এই বাগান থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সুপারি ব্যবসায়ী রশিদ আহমদ জানান, আমরা প্রতিবছর টেকনাফ থেকে সুপারি ক্রয় করে রংপুর, বগুড়া, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চালান দিয়ে থাকি। কিন্তু সুপারির গুণগত মান না থাকায় লাভের চেয়ে লোকসান হয়েছে বেশি। কিন্তু চলতি মৌসুমে সুপারির দাম যেমন সস্তা তেমনি গুণগত মানও ভালো হওয়ায় প্রচুর লাভবান হচ্ছি। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে চলতি মৌসুমে টেকনাফের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাকা সুপারি সংগ্রহ করে সংরক্ষণ ও নার্সারি করব।

টেকনাফ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, চলতি মৌসুমে টেকনাফ উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে ১২৬০ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়েছে। যা রীতিমতো রেকর্ড। অধিকাংশ সুপারি চাষিকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ, কৃষি উপকরণ দেওয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here