কক্সবাজারে পানিবন্দী ৩২ ইউনিয়ন, পাঁচ জনের মৃত্যু

0

টানা বৃষ্টি, জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার জেলার ৩১ ইউনিয়নের ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ঢলে আসা কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে চকরিয়ার মাতামুহুরি নদীতে ভেসে যায় এক যুবক। ২ ঘণ্টা পর এই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বরইতলী এলাকায় বাড়ির দেয়াল চাপায় ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে মা-মেয়ে নিহত হয়েছেন। এতে আহত রয়েছেন একজন। একই সঙ্গে মেরিন ড্রাইভ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টসহ উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়ার অফিস। আবহাওয়া অফিসের কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র দাশ জানিয়েছেন, রবিবার বিকাল ৩টা থেকে সোমবার বিকাল ৩ টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার সকাল ৬ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৮১ মিলিমিটার। আগামী ৩ দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

মুহাম্মদ শাহীন ইমরান আরও বলেন, চকরিয়া উপজেলায় ৯৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ পর্যস্ত চকরিয়ায় ৭ হাজার পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও পেকুয়ায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে পেকুয়া সড়কে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের কে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কাছে যা বরাদ্দ রয়েছে তা দিয়ে দুর্গত মানুষদের সহায়তা করা হচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে কি পরিমাণ চাহিদা প্রয়োজন তা পাওয়া যায়নি। উপজেলা থেকে চাহিদাগুলো পাওয়া মাত্র মন্ত্রণালয়ে চাহিদা প্রেরণ করা হবে।

বৃষ্টি, জোয়ারের পানি এবং পাহাড়ি ঢলে চকরিয়া উপজেলার কমপক্ষে ১২ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পানি বন্দী রয়েছে মানুষ। চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরি নদীতে ভেসে আসা কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে রশিদ নামের এক যুবক নিখোঁজ রয়েছে। দুপুর ১ টার দিকে নিখোঁজ হওয়া এ যুবকের মরদেহ বিকাল ৩ টার দিকে নদীর লক্ষ্যরচর মোহনা থেকে উদ্ধার করা হয়।

তিনি জানান, পার্বত্য জেলা ও চকরিয়ার পাহাড়ি ঢল নেমে আসার মাধ্যম মাতামুহুরী নদী। পাহাড়ি ঢল, বৃষ্টি এবং জোয়ারের ঢেউতে বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। চকরিয়ার একটি পৌরসভা ও ১৮ টি ইউনিয়নের মধ্যে পৌরসভা সহ ১২ ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। এর মধ্যে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে কাঁকড়া, লক্ষ্যরচর, বুমুবিল ছড়ি, সুরেজপুর-মানিকপুর, কৈয়ারবিল, কোনাখালী ইউনিয়ন। তবে পানি ক্রমাগত নেমে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান জানান, ১২ ইউনিয়নের ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মাতামুহুরী নদীতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্লাবিত এলাকার লোকজনকে সরকারি সহায়তা প্রদান শুরু করা হয়েছে। প্লাবিত এলাকার লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হচ্ছে।

অপরদিকে ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও, জালালাবাদ ও পোকখালী ইউনিয়নের ৭০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ঈদগাঁও নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদ সীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।  

জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙে এই তিনটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার প্লাবিত হওয়া অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত সংস্কার করা না হলে এটি আরো বড় আকারে হতে পারে বলে জানান। এদিকে, সামুদ্রিক জোয়ারের ঢেউতে মেরিন ড্রাইভ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা পয়েন্ট, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। মেরিন ড্রাইভের কিছু অংশে জিওব্যাগে বালির বাঁধ তৈরি করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হলেও নতুন করে আরও কয়েকটি স্পটে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here