জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ গঠন করেছে সরকার। সোমবার রাতে এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এনবিআর কর্মকর্তাদের সংগঠন এনবিআর ঐক্য পরিষদ তিন দিনের কলম বিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তবে এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, এতে কর্মকর্তাদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। আর সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বলছে, এই পৃথকীকরণের ফলে কর নির্ধারণকারী ও আদায়কারীরা আলাদা থাকবে। ফলে একচেটিয়া ক্ষমতা বা গোপন সমঝোতার সুযোগ থাকবে না।
এনবিআর ভেঙে দুটি বিভাগ করার সিদ্ধান্তকে সাহসী পদক্ষেপ বলে মনে করেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। তার মতে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে দুটি নতুন বিভাগ—রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এই সংস্কারের ফলে বাংলাদেশের কর প্রশাসনের আধুনিকীকরণ, রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষ হবে—এমন সম্ভাবনা আছে।
গণমাধ্যমকে সেলিম রায়হান জানান, নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম আলাদা করার সিদ্ধান্ত ভালো পদক্ষেপ। এটি আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত উত্তম রীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। একটি বিভাগ নীতি প্রণয়ন ও আইন তৈরির কাজে যুক্ত থাকবে, অন্যটি আদায় ও বাস্তবায়নের কাজ করবে—এভাবে দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও গতিশীলতা বাড়ানো সম্ভব। এই কাঠামো বাংলাদেশের রাজস্বব্যবস্থাকে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও ক্রমবর্ধমান রাজস্ব চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সহায়ক হতে পারে।
তিনি আরও জানান, এই সংস্কারের সফলতা অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে। বাংলাদেশের সামগ্রিক করব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার দরকার। বাড়াতে হবে করের আওতা। করছাড় কমাতে ও পরোক্ষ করের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা থেকে সরে আসার জন্য জোরালো প্রচেষ্টা নেওয়া উচিত। প্রত্যক্ষ কর, বিশেষ করে আয়করের ভূমিকা বাড়াতে হবে। জনসংখ্যার ধনী অংশ, যারা সঠিকভাবে কর দেয় না, তাদের করের আওতায় আনতে হবে।
এ ছাড়া এই নতুন কাঠামো কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে। তাদের সক্রিয় ও অর্থবহ অংশগ্রহণ ছাড়া নতুন ব্যবস্থা ভালোভাবে কাজ করবে না- এমনটা মনে করেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।