এনবিআর ভাগ করার অধ্যাদেশ যে কারণে বাতিল চান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

0

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর ভাগ করে দু’টি আলাদা বিভাগ করার অধ্যাদেশ বাতিল চেয়ে কলম বিরতি কর্মসূচির মধ্যে সংস্থার কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা অধ্যাদেশের বিরোধিতার কারণ তুলে ধরেছেন।

‘সংস্কারের বিরোধী নন’ দাবি করে এনবিআরের আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গঠিত ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, অধ্যাদেশটিতে ‘অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয়েছে’।

এনবিআরকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা করতে গত ১৭ এপ্রিল খসড়া অধ্যাদেশে অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।

বাকি প্রক্রিয়া শেষ করে তা দ্রুত জারি হওয়ার কথা থাকলেও অধ্যাদেশের খসড়া অনলাইনে এলে তা দেখে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এই দুই ক্যাডারের অ্যাসোসিয়েশন এটি বাতিলের দাবি তোলে।

খসড়া অনুমোদনের ২৫ দিন পর সোমবার রাতে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে তিন দিনের কলম বিরতি কর্মসূচি ডাকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মত এ কর্মসূচি চলেছে; তবে এর আওতার বাইরে ছিল আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, রফতানি কার্যক্রম ও বাজেটের কার্যক্রম।

বিবৃতিতে পরিষদ বলেছে, এনবিআরের কাজ ‘অত্যন্ত বিশেষায়িত এবং আইননির্ভর’ এবং এর জন্য ‘দীর্ঘমেয়াদী অভিজ্ঞতা, পেশাগত দক্ষতা ও নীতিগত গভীরতা প্রয়োজন হয়’।

পরিষদ দাবি করছে, “প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশেষায়িত জ্ঞানের অনুপস্থিতিতে নীতিনির্ধারণে অসামঞ্জস্য ও বাস্তবায়নে বিঘ্ন ঘটবে- যা সরাসরি রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

তাদের ভাষ্য, “অধ্যাদেশে এনবিআরের সাংগঠনিক স্বাতন্ত্র্য ও পেশাগত স্বকীয়তাকে অস্বীকার করা হয়েছে, রাষ্ট্রের অর্থনীতির মূল কাঠামো বিনষ্ট করে রাজস্ব আহরণের প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কার্যক্রমটি একই সাথে বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর সাথে সাংঘর্ষিক।

“পাশাপাশি রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় অযাচিত হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনার সার্বিক কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

অধ্যাদেশে বর্তমানের ‘যে নেতৃত্বগত সমস্যা রয়েছে, সেটাকেই অন্য ফরম্যাটে, একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে’ রাখা হয়েছে দাবি করে পরিষদ বলেছে, “সমস্যাকে স্বীকার তো করা হয়েইনি, বরং দুই বিভাগের সর্বোচ্চ পদে দুই নেতাকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে সমস্যা আরও বাড়বে।”

বর্তমানে এনবিআরের প্রধান সরকার নিয়োগ করেন সচিবদের মধ্য হতে, এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্য হতে নয়। এনবিআরের মত বিশেষায়িত ও পেশাদারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে এটিকে একটি বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা মনে করে পরিষদ।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অধ্যাদেশের মাধ্যমে আগের ধারাবাহিকতাই বহাল রাখা হয়েছে।

“এক্ষেত্রে কোনো সংস্কার হয়নি, যেটি এনবিআর কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এর ফলে রাজস্ব প্রশাসনে উড়ে এসে জুড়ে বসার প্রথা চলতে থাকবে, যা রাজস্ব আদায় কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্য সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের উদাহরণ টেনে পরিষদ বলেছেন, এনবিআর সংস্কারে বিশেষ পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদনটি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ‘ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি’, এমনকি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকেও ‘সরবরাহ করা হয়নি’।

ফলে এনবিআরের কর্মকর্তারা এ বিষয় সম্পর্কে ‘পুরোপুরি অন্ধকারে’ ছিলেন দাবি করে তারা বলেছেন, অন্য সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হলেও রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক বিশেষ পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।

এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিষদ বলছে, “তড়িঘড়ি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বিলুপ্ত করা হলো প্রত্যাশী সংস্থার সাথে কোন আলোচনা ব্যতিরেকেই, যা গভীর সন্দেহের উদ্রেক করে।”

এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিষদের দাবি হল-

– প্রণীত রাজস্ব অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করা।

– জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা।

– পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন এবং অর্থনৈতিক অবস্থা বিষয়ক শ্বেতপত্র আলোচনা-পর্যালোচনা করে প্রত্যাশী সংস্থাগুলো, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতারাসহ সকল অংশীজনদের মতামত নিয়ে সমন্বিত, অংশগ্রহণমূলক ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার করা।

পরিষদ বলেছে, শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত একইভাবে তাদের কলম বিরতি কর্মসূচি চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here